পাকিস্তানের ক্ষমতার কাঠামোতে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সেনাপ্রধান পদে থাকা ব্যক্তি সবসময়ই অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে থাকেন। তবে বর্তমান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসীম মুনির সেই প্রভাবকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় সেনাপ্রধান হিসেবে আসীম মুনিরের দৃঢ় অবস্থান ও সাহসী নেতৃত্ব দেশজুড়ে প্রসংসিত হয়েছে। জাতীয়ভাবেও অসাধারণ মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের ইতিহাসে মাত্র দুজন সেনাপ্রধান সর্বোচ্চ সামরিক পদবী ফিল্ড মার্শাল অর্জন করেছেন- আইয়ুব খান ও আসীম মুনির। তবে পথ দুজনের ছিল ভিন্ন। ১৯৫৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণা করেছিলেন আইয়ুব খান; কিন্তু আসীম মুনিরকে এই পদবি দিয়েছে একটি গণতান্ত্রিক সরকার।
গত মে মাসে জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত শুরু করে সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’। এর জবাবে পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’, যার নেতৃত্ব দেন আসীম মুনির। সফলভাবে অভিযান পরিচালনার স্বীকৃতিস্বরূপ সেই মাসেই তিনি জেনারেল থেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন।
এই ঘটনার পর থেকেই দেশে গুঞ্জন ছড়িয়েছে- বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে সরিয়ে আসীম মুনির প্রেসিডেন্টের পদে বসতে পারেন। তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট সামরিক ও বেসামরিক উভয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে- এই গুঞ্জনের কোনো ভিত্তি নেই।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী একে ‘অর্থহীন ছাইপাঁশ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘ফিল্ড মার্শাল আসীম মুনির কখনো প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, ভবিষ্যতেও এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনীর মধ্যে জাতীয় স্বার্থে একটি কার্যকর সম্পর্ক রয়েছে, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গেও বজায় আছে।’
একইভাবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এই গুঞ্জনকে ‘বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তার ভাষায়, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে সেনাপ্রধানকে বসানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
আসীম মুনির পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে অন্যতম দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ক্যারিয়ারের শুরুতে মাঙ্গলা অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য তিনি অর্জন করেন সোর্ড অব অনার, যা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান।
এছাড়া তিনি একমাত্র কর্মকর্তা যিনি একই সঙ্গে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২২ সালে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন।
সূত্র : গালফ নিউজ
মন্তব্য করুন