পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির মেয়াদ আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষের আগমুহূর্তে সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী দুররানির সঙ্গে ‘গোপন’ বৈঠক করেছেন তিনি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বৈঠক নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।
দুররানি পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এফ) নেতা এবং প্রয়াত সামরিক শাসক জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফের আমলে তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সর্বশেষ ২০২১ সালে বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের আয়োজন করে খবরে এসেছিলেন।
২০২০ সালে ইমরান খানের পিটিআই সরকারের আমলে ‘গুরুত্বপূর্ণ বার্তা’ পৌঁছে দিতে লাহোরের কোট লাখপাট জেলে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শাহবাজ শরিফের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি।
দ্য নিউজের খবরে বলা হয়েছে, একদিন আগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী দুররানি প্রেসিডেন্ট আলভির সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে তাদের এ বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
তাদের এ বৈঠককে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অস্বাভাবিক বলে অভিহিত করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দুররানি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। এ ছাড়া রাজনীতিতে গোপন বৈঠক আয়োজনে তার খ্যাতি রয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন আইওয়ান-ই-সদরে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গতকালের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত শুক্রবার বৈঠকটি আইওয়ান-ই-সদরের (প্রেসিডেন্সি) চতুর্থ তলায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় অবস্থিত। বৈঠকের সময় সেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি ছিল না।
এমনকি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কর্মীদেরও ভবনের ওই এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গত শুক্রবার আইওয়ান-ই-সদরের চতুর্থ তলায় ‘তিনজন প্রবীণ’ ব্যক্তি বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর সেখানে কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি জারি করা হয়নি।
তবে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের মতে, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন। এর আগে আসন্ন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণে বৈঠকের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। তবে পাকিস্তানের সিইসি সেই বৈঠক প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ২০১৭ সালের নির্বাচন আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষমতা কমিশনের হাতে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধে পাকিস্তানের আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়াও ছিল একই।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন বলে জল্পনা রয়েছে এবং সেই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবারের বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকের আরেকটি দিক হতে পারে আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের সংশোধনী। মূলত এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সম্প্রতি টুইট করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তিনি ওই দুটি বিলে স্বাক্ষর করেননি এবং অনুমোদনও করেননি। কিন্তু তার অনুমোদন ছাড়াই সেগুলো পরে আইনে পরিণত হয়।
বৈঠকের তৃতীয় আরেকটি দিক হতে পারে বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ। মূলত আজ ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরিফ আলভির মেয়াদ শেষ হবে। তবে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ করে তিনি যে বাড়িতে ফিরে যাবেন তা প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট তার পদে বহাল থাকতে পারেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সংবিধানে নির্বাচিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শ মেনে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি গত ৯ আগস্ট দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, তারপর ১২ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকারের নেতৃত্বাধীন সরকার। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসারে আগামী নভেম্বর মাস শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হওয়ার কথা পাকিস্তানে।
মন্তব্য করুন