খেলার মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর পর পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠেও দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত নাম ইমরান খান। বিশ্বে তিনিই সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার। তবে সেই ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হয়নি। মেয়াদ পূরণের আগেই অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ২০২২ সালে। যদিও পাকিস্তানের ইতিহাসে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। আগেই বিদায় নিতে হয়েছে কোনো না কোনো কারণে।
ইমরান খানের জন্ম লাহোরে, ১৯৫২ সালে। পড়াশোনা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়ার্কেস্টার কলেজে। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় সেখান থেকেই। দুই দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গন কাঁপিয়ে, অবসর নেওয়ার আগে ১৯৯২ সালে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেন। খ্যাতি পান পাকিস্তান ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক হিসেবে।
ইমরান খানের জন্মই যেন হয়েছে প্রদীপের আলোয় থাকার জন্য। সে কারণেই কিনা চার বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। তার নেতৃত্বে ’৯৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেয় দল। যদিও ব্যর্থ হয় সে মিশন। ’৯৯ সালের সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় বসলে তাকে সমর্থন দিয়ে আলোচনায় আসেন ইমরান খান। ২০০২ সালের গণভোটে মোশাররফ সরকারের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ কারচুপির অভিযোগ উঠলে সমর্থন তুলে নেন ইমরান খান। ওই বছরই নিজের নির্বাচনী এলাকা মিয়ানওয়ালিতে জয় পান; স্থানীয় পার্লামেন্টে বিরোধী দলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। পরের বছর ভোট জালিয়াতির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করে ফের ছিটকে পড়েন মূলধারার রাজনীতি থেকে।
তবে দৃশ্যপট পাল্টে যায় ২০১৩ সালের দশম সাধারণ নির্বাচনে। নির্বাচনী প্রচারে ইমরানের নতুন পাকিস্তান গড়ার ডাকে সাড়া দেয় লাখো পাকিস্তানি। শেষ পর্যন্ত নওয়াজ শরিফের দল পিএমএলএন নিরঙ্কুশ জয় পেলেও প্রান্তিক দল থেকে দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্লামেন্টে জায়গা করে নিয়ে চমক তৈরি করে ইমরান খানের পিটিআই। আবারও নিজ আসনে জয়ী হন তিনি।
বছর না গড়াতেই নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তোলেন ইমরান খান। সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়ে জোরেশোরে মাঠে নামে পিটিআই। নওয়াজের পদত্যাগের দাবিতে সহিংস আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচিসহ সব প্রধান শহর।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য মেয়াদ পূর্তির আগেই দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে ২০১৭ সালে ক্ষমতা ছাড়েন নওয়াজ। এমনকি এর মধ্যে এক বছর কারাবন্দিও হন পাকিস্তানের তিনবারের নির্বাচিত এই প্রধানমন্ত্রী। নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত প্রধান রাজনৈতিক দলের ভরাডুবি সুযোগ হয়ে আসে পিটিআইর জন্য।
ওই সময় জনমত জরিপেও ছিল ইমরানের জয়ের আভাস। অভিযোগ আছে, ইমরানকে জেতাতে নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ইমরান। সব অভিযোগ এড়িয়ে তার দুর্নীতি দমন আর দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার এজেন্ডাকেই শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিল পাকিস্তানের জনতা।
ব্যক্তিজীবনেও নানা উত্থান-পতন দেখেছেন ইমরান খান। ‘প্লে-বয়’ খ্যাত এই নেতা ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন ব্রিটিশ নাগরিক জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। পরে আরও দুবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, দুই সন্তানের জনক ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান ।
রাজনীতির বাইরে মানবতামূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত ইমরান খান । গরিবদের জন্য ক্যান্সার হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন আর ইউনিসেফের বিশেষ শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন