পাকিস্তানের সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফল জালিয়াতির ঘটনা যেন একেবারেই ওপেন সিক্রেট। বেশকিছু আসনে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল ইমরান খানের দল পিটিআই। এমন অভিযোগের মধ্যেই এবারের নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও ইমরানের পক্ষে নিজের আসন ছেড়ে দিয়ে সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের এক নেতা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সিন্ধ প্রাদেশিক পরিষদের একটি আসনে জয়ী হন জামায়াত–ই–ইসলামীর প্রার্থী হাফিজ নাঈম উর রেহমান। করাচি শহরের পিএস–১২৯ আসনে জয়ী এই জামায়াত নেতা ওই আসনে পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ তথা পিটিআই নেতা সাইফ বারীর বিপক্ষে লড়েছিলেন। হাফিজ নাঈম উর রেহমানের অভিযোগ, পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীকে হারাতে ভোট কারচুপি করে তাকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার জামায়াত-ই-ইসলামীর ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ নাঈম উর রেহমান বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের অবৈধ উপায়ে জেতাতে চায়, আমরা তা মেনে নেব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনমতকে সম্মান করতে হবে। বিজয়ীকে জিততে দিন, পরাজিতকে হারতে দিন। কেউ যেন অতিরিক্ত সুবিধা না পায়।’ পাকিস্তান জামায়াতের এই নেতার দাবি নির্বাচনে তিনি ২৬ হাজার ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফ বারী পেয়েছেন ৩১ হাজার ভোট। কিন্তু পিটিআই প্রার্থীর ভোট কমিয়ে ১১ হাজার দেখানো হয়েছে।
তবে ভোটে কারচুপির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। এখন পিএস-১২৯ আসনটি কে পাবে, তা নিশ্চিত নয়। জামায়াত-ই-ইসলামীর করাচির ওই আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাটিকে স্বাগত জানিয়েছে পিটিআই। পিটিআই-এর দাবি তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা আরও আসন পেতেন। ভোটের ফলাফলে ব্যাপক কারচুপির কারণে তারা বহু আসন হারিয়েছেন।
২০২২ সালের ১০ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরপর তার দল পিটিআইকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বাতিল করা হয় দলের নিবন্ধন ও নির্বাচনী প্রতীক। এমনকি ইমরান খানকেও নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত। এমন পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে পিটিআই নেতারা।
সেনাসমর্থিত প্রশাসনের প্রবল বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনের মধ্যে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৯৩টি। অন্যদিকে সেনাসমর্থিত রাজনৈতিক দল নওয়াজ শরীফ নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ তথা পিএমএল-এন ৭৫টি ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি তথা পিপিপি ৫৪টি আসন পেয়েছে।
মন্তব্য করুন