যুদ্ধ মানেই এখন পরমাণু হামলার হুমকি। তাই পরাশক্তির সব দেশই ঝুঁকছে ভয়ংকর এই মারণাস্ত্রের দিকে। পাল্লা দিয়ে চলছে কে কার আগে কত অস্ত্র মজুত করতে পারে। সেই তালিকায় সবার ওপরে রাশিয়া-আমেরিকা। বিশ্বের মোট পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের ৯০ শতাংশের মালিক এই পরাশক্তির দুই দেশ। বলা হচ্ছে, ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় কমপক্ষে দুই হাজারের মতো পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি)’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
সুইডেনভিত্তিক সিপ্রির বার্ষিক প্রতিবেদনে পরমাণু অস্ত্রকে কেন্দ্র করে, বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও মস্কোর দ্বৈরথ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরমাণু নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান পরমাণু ভাণ্ডার নিয়েও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
সিপ্রির ভাষায়, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বৈরথের অর্থ হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্রে পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র সংযুক্ত করা হয়েছে কিংবা পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম বোমারু বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ‘অস্ত্র ও নিরস্ত্রীকরণ পরিস্থিতি’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে সিপ্রি বলছে, বিশ্বে ব্যবহারযোগ্য পরমাণু যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে।
পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আর এটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সম্ভাব্য ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আনুমানিক ৯ হাজার ৫৭৬টির মতো যুদ্ধাস্ত্র মজুত রয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর যুদ্ধাস্ত্র বেড়েছে ৮৬টি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে যত পরমাণু অস্ত্র মজুত আছে তা দিয়ে গোটা পৃথিবী কয়েকবার ধ্বংস করা সম্ভব। পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে শঙ্কার একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি অবস্থানে যায়। এর জেরে গেল ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি স্থগিত করে, যা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে বর্তমানে একমাত্র পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি।
সিপ্রির প্রতিবেদনে বিশেষ ভাগে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের প্রসঙ্গ। ২০২২ সালের শুরুতে তাদের হাতে যেখানে ৩৫০টি পরমাণু অস্ত্র ছিল, সেখানে এ বছরের শুরুতে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৪১০। এই মারণান্ত্র আরও বাড়াতে মরিয়া বেইজিং। দক্ষিণ এশিয়ার চিরশত্রু ভারত ও পাকিস্তান একইভাবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। উত্তর কোরিয়া তো সামরিক উচ্চাভিলাষকে সব সময়ই সামনের দিকে রাখে। ইসরায়েল পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করলেও শোনা যায়, তারা ক্রমান্বয়ে এই অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধি করছে।
মন্তব্য করুন