হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ

বিদ্যুৎ খাতের ক্রয়চুক্তি পর্যালোচনা
বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো (পিপিএ) পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য গঠিত কমিটি সম্প্রতি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পিপিএ পর্যালোচনা শেষে প্রতিবেদaন দিয়েছে। সরকারি খাত এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানায় থাকা ২৬টি কেন্দ্রের পিপিএ পর্যালোচনা শেষে এসব কেন্দ্র থেকে বছরে দুই হাজার ৬৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলোর পিপিএও পর্যালোচনা করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কমাতে চাই। এজন্য বড়-ছোট সব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। বেসরকারি খাতেও পর্যালোচনা করা হবে। উভয় পক্ষের বোঝাপড়ার মাধ্যমে এটা করা হবে, চাপ দিয়ে নয়। কারণ এখন আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাই না। তাই ব্যয় কমাতে হবে।’

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত পিপিএগুলো পর্যালোচনা করে ব্যয় কমানোর সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী রেজার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিডিবির অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোকে পিপিএ, ট্যারিফ এবং পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সংক্রান্ত এক্সেল-ভিত্তিক আর্থিক মডেল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পরে চলতি বছরের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৈঠকে কমিটি পিপিএতে অসংগতিগুলো চিহ্নিত করে। পাশাপাশি একটি সংশোধিত ট্যারিফ কাঠামো প্রস্তাব করে এবং একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে। গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির চতুর্থ বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি, বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি এবং আরপিসিএল-নোরিনকো পাওয়ার প্লান্টের পিপিএ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল), ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি), রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেডের (বিআরপিএল) অধীনে থাকা ২৩টি সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রেরও পিপিএ মূল্যায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব কেন্দ্রের পিপিএ পর্যালোচনার সময় কমিটি দেখতে পায়, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) বেশি ধরা হয়েছে। পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (ওঅ্যান্ডএম) বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি হিটিং ভ্যালু (বিটিইউ) বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে। অধিকাংশ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে আরওই ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এ ছাড়া প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। একইভাবে হিটিং ভ্যালুও বেশি দেখানো হয়েছে, যা প্রকৃত সক্ষমতা থেকে বেশি। কমিটি এসব পর্যালোচনার পর মনে করছে, এই তিনটি খাতে সংশোধন আনা গেলে বছরে প্রায় দুই হাজার ৬৩০ দশমিক ৩১ কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে।

কমিটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আরওই ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হলে পিডিবি বছরে ৩১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, নওপাজেকো (৬টি প্লান্ট) ১৩৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এপিএসসিএল (৫টি প্লান্ট) ৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইজিসিবি (৩টি প্লান্ট) ৩২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আরপিসিএল (৪টি প্লান্ট) ৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বিআরপিএল (২টি প্লান্ট) ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এ ছাড়া এপিএসসিএলের ৫০ মেগাওয়াট ইঞ্জিন প্লান্টে আরওই ৪ শতাংশ রয়েছে।

এ ছাড়া অন্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থায়ী পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) চার্জ কমিয়ে ৪৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ১০ শতাংশের কম প্লান্ট ফ্যাক্টরে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংশোধিত স্থায়ী ওঅ্যান্ডএমের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধের সীমা নির্ধারণ করে ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং যৌথ উদ্যোগের কোম্পানিগুলোর প্রকল্প নির্মাণকালে ইক্যুইটির ওপর আয় পরিশোধ বাতিল করে ৬৮৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করা। এ ছাড়া প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ১০০ কিলোক্যালোরি তাপ হার কমিয়ে ৫৩৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) ছাড়া বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) জন্য প্রকৃত হারে ওঅ্যান্ডএম শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করে ১৬৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছায় তাদের পিপিএ পুনর্বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ, বিদ্যুতের মূল্যের স্বচ্ছতার জন্য পিপিএ-র অসঙ্গতিগুলো সংশোধন করা আবশ্যক। পিডিবি প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৯৫ পয়সায় কিনে ১২ টাকায় বিক্রি করে। ফলে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় তিন টাকা ৫ পয়সা লোকসান দিতে হচ্ছে, যা ভর্তুকির মাধ্যমে মেটানো হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাজরীনের আগুনে ঝলসে যাওয়া স্মৃতি, ১৩ বছর পরও শ্রমিকদের আর্তনাদ

নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বাড়বে: অর্থ উপদেষ্টা

কক্সবাজারে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি নিহত

মাছের ঘের থেকে কৃষকের মরদেহ উদ্ধার

শুটিং সেটে গুরুতর আহত, প্রযোজকের কথা ভাবলেন শ্রদ্ধা

আঁধারে শেষ ২০ বিঘা সবজি ক্ষেত

বানিয়ে নিন মচমচে ফুলকপির পকোড়া

মুক্ত আকাশে ফাঁদে আটকা ৯০টি শালিক পাখি

রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যা : অভিযোগ গঠনে শুনানির তারিখ নির্ধারণ

প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইল রিয়াল মাদ্রিদ

১০

দুর্নীতি চাই এবং চাই না এর মধ্যে ফাঁক রয়েছে : দুদক চেয়ারম্যান

১১

বিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা জটিলতায় টেলর সুইফট

১২

পুরো অ্যাশেজ থেকেই কি ছিটকে গেলেন অজি তারকা?

১৩

দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত, শেষ স্ট্যাটাস ভাইরাল

১৪

ঢাবি শিক্ষক কার্জনের জামিন

১৫

৩ বছর বিদেশে থেকেও ভোগ করেন বেতন-ভাতা

১৬

রহস্যময় বেলুনে লিথুনিয়ার বিমানবন্দর বন্ধ

১৭

বাউল শিল্পী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় এনসিপির নিন্দা

১৮

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরোয়া টোটকায় পা হবে নরম তুলতুলে

১৯

সিনিয়রদের মুখের ভাষাকে দুর্ভিক্ষ বলে এনসিপি নেতার পদত্যাগের ঘোষণা

২০
X