তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে আজ ১৩ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ভোটের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কারণ, এই স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটি ওয়াশিংটন ও বেইজিং দুপক্ষের জন্যই কৌশলগতভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের ফল চীনের সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, একই সঙ্গে এই পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়াতে পারে এবং সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। খবর সিএনএনের।
তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) সাই ইং-ওয়েন। চীন এ রাজনৈতিক দলকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে থাকে। টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর সংবিধান অনুসারে সরে দাঁড়াচ্ছেন সাই ইং-ওয়েন। এখন তার উত্তরসূরি হওয়ার লড়াইয়ে তিনজন প্রার্থী আছেন। ডিপিপি অন্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে ১১৩ সদস্যের আইনপ্রণেতার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার আশা করছে। তাহলে আইন তৈরি, বাজেট, যুদ্ধ ঘোষণা এবং কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে।
তাইওয়ানের এ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনেও বিরাজ করছে উত্তেজনা। নির্বাচনের আগে তাইওয়ানে যুদ্ধবিমান, নৌ জাহাজসহ চীনা বেলুনও মোতায়েন করেছে বেইজিং। চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ তাইওয়ানের। মূলত তাইওয়ানকে চীন নিজেদের অংশ মনে করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তাইওয়ান। কিন্তু এতসব বাধা সত্ত্বেও বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে নিয়ে মাঠে নেমেছে তাইওয়ান। এদিকে গুজবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ান থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানি করা বিষাক্ত শূকর তাইওয়ানের নাগরিকদের খাইয়ে দেওয়া কিংবা চীনে আক্রমণ চালাতে জনগণের কাছ থেকে গোপনে রক্ত সংগ্রহ করে জীবাণু অস্ত্র বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর মতো গুজব আগেই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তবে তাইওয়ানের জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন করে এসব বিষয় আলোচনায় এসেছে। এরপর মার্কিন বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, গত বছর মাত্র ৩৪ শতাংশ তাইওয়ানের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বস্ত দেশ মনে করেছে। অথচ ২০২১ সালে ৪৫ শতাংশ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বস্ত দেশ মনে করত।
তাইওয়ান গোটা বিশ্বের জন্য যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ?: জাতিসংঘ তাইওয়ানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং সারা বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশ এ স্বীকৃতি দিয়েছে (প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় ও ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো)। বিশ্বের বেশির ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করি–ফোন থেকে ল্যাপটপ, ঘড়ি, গেম কনসোল–এসবই তাইওয়ানের তৈরি কম্পিউটার চিপসের সাহায্যে চলে। এদিক থেকে তাইওয়ানের শুধু একটি কোম্পানি-দ্য তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি বা টিএসএমসি সারা বিশ্বের অর্ধেক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
টিএসএমসিকে তাই বলা হয় ‘ফাউন্ড্রি’, যা এমন একটি কোম্পানি, যারা চিপস ভোক্তা ও সামরিক ক্রেতাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি বিরাট বড় শিল্প, ২০২১ সালের হিসাবে যার সম্পদ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বিগত বছরগুলোতে ওয়াশিংটন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য নানা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে প্রযুক্তিক্ষেত্রে চীনের প্রবেশাধিকার কমে আসে এবং যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ানসহ তাদের মিত্ররা মাইক্রোচিপ তৈরিতে আরও এগিয়ে যেতে পারে। তাইওয়ানে চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা বেইজিংকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এনে দিতে পারে।