রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
মারুফ হোসেন
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৩, ০৯:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন হাবিপ্রবির রাসেল

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন হাবিপ্রবির রাসেল

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদে পড়ছেন মো. রাসেল। তবে সবার কাছে তার বড় পরিচয়—শিল্পী। ছবি এঁকেই ক্যাম্পাসের সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন। রাসেলের আঁকাআঁকির দুনিয়ায় ঢু মেরেছেন মারুফ হোসেন—

ইচ্ছে ছিল চারুকলায় পড়বেন। প্রস্তুতিও নিতে থাকেন। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি শেষতক। তাতেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা চেপে বসে রাসেলের মনে। আর সেই শখের স্বপ্নের চারা ডালপালা মেলে হয়ে গেছে বটবৃক্ষ। ছবি এঁকে রাসেল এখন ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ। শৈশবে বইয়ের ভেতর ছাপা ছবিগুলোতেই তার মন হারাত। বই কাছে পেলে আগে দেখতেন ভেতরের আঁকিবুঁকি। দেখে দেখে সেগুলো আঁকতেনও। আর এভাবেই ছবির জগৎ আর নিজের জগৎ একাকার হয়ে যায় একসময়। যথারীতি আর্টের ক্লাসেই তার নম্বর উঠত বেশি। সেটাই ছিল জীবনের প্রথম অনুপ্রেরণা। হাতের লেখার প্রতিও ছিল দারুণ ঝোঁক। লিখতে পারতেন কয়েক ধরনের। কারও লেখা দেখে সেটা নকল করার দক্ষতাও আছে তার। একবার রাসেলের অভিভাবককে স্কুলে আসতে বলেন শ্রেণিশিক্ষক। রাসেলের বিরুদ্ধে নালিশ ছিল তার। স্কুলে গিয়েছিলেন রাসেলের মা। স্যার তাকে বললেন, আপনার ছেলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে আনে। জবাবে তার মা বললেন, আমার ছেলে একদিন একেক স্টাইলে লেখে। এ কারণেই এমনটা মনে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও হাতের লেখা নিয়ে মজার ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন রাসেল। একবার এক শিক্ষক রাসেলের প্র্যাকটিকালের নম্বর কেটেই দিলেন। তিনিও ভেবেছিলেন রাসেল অন্যের হাতে লিখিয়ে এনেছে। কারণ পরীক্ষার খাতার সঙ্গে তার হাতের লেখার মিল পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্যারের সামনে দুই স্টাইলে লিখে নিজের লেখা প্রমাণ করতে হলো রাসেলকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা তার ছবি দেখে উৎসাহ দিয়েছে নিয়মিত। রাসেলও অকপটে স্বীকার করলেন—বন্ধুদের এমন উৎসাহ না পেলে ক্রমাগত আরও ভালো কিছু আঁকার তাগাদা কাজ করত না তার ভেতর। আড্ডা থেকে শুরু করে ক্লাসের ছবি আঁকার সময়ও রাসেলের আঁকিবুঁকিতে মুগ্ধতা প্রকাশ করত সবাই। এভাবেই একদিন ইউটিউব দেখে শিখতে থাকেন রিয়েলিস্টিক পোর্ট্রেটের কৌশল। পরে সেটা প্রয়োগ করেন বন্ধুদের ওপর। কুড়ান অনেক বাহবা। ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারে রাসেলের আঁকার হাত একেবারেই আলাদা। এ সময় এক বন্ধু তাকে ফেসবুক পেজও খুলে দেন। তাতে একটি অর্ডারও আসে। সেই ছবিটি এঁকে আয় করেন আড়াইশ টাকা। পেজটির নাম ‘চিলেকোঠার চিত্রপট’। পরে আবার নাম বদলে রাখেন গ্রে টাচ তথা ধূসর স্পর্শ। পেনসিল স্কেচ করেন বলেই এমন নাম। ছবি এঁকে রাসেল পেয়েছেন পুরস্কার। ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘ফ্রেমে বাঁধা স্বপ্ন (দ্বিতীয় প্রহর)’ প্রদর্শনীতে প্রথম হন তিনি। ‘ইউথ ট্যালেন্ট’ আয়োজিত একটি অনলাইন প্রতিযোগিতায়ও পুরস্কার জেতেন। তবে বেশি পেয়েছেন বন্ধুদের ভালোবাসা। ছবি এঁকে আয়-রোজগার হচ্ছে কেমন জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকেই অর্ডার নিচ্ছি। প্রথমদিকে স্কেচপ্রতি ২৫০ টাকা নিতাম। এখন কাজের ধরন অনুযায়ী ৬০০ থেকে ৩৩০০ টাকা পর্যন্ত নিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছবি দেখে এঁকে ফেলে সহজ ব্যাপার নয়। হাইপাররিয়েলিস্টিক ছবি আঁকতে দারুণ সাধনা চাই। শুরুর দিকটায় একটি ছবির পেছনে দুই-তিন ঘণ্টা লাগত। এখন তো সাত-আট ঘণ্টাও লেগে যায়। আর বড় ধরনের একটি কাজে ১২-১৫ ঘণ্টা লেগে যায়।’ পড়ার ফাঁকে আঁকার সময় কখন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আবার শব্দ হলে আঁকতে পারি না। তাই রাতই আঁকার জন্য আদর্শ সময়। অনেক সময় কাজ করতে করতে রাত শেষ হয়ে যায়।’ ফেসবুক পেজে রাসেল তার সৃষ্টিশীল শৈল্পিক কাজগুলো পোস্ট করে থাকেন। কেউ বিস্ময়ে বলে, আঁকা ছবি এত জীবন্ত হয় কী করে। কেউ বিশ্বাস করতে না পেরে বলে, এসব অ্যাপ দিয়ে করেছে। নিজের এ স্কেচ জীবনে রাসেলের আছে কিছু আনন্দ-বেদনার স্মৃতি—‘একবার একটা স্কেচ প্রায় ৮-৯ ঘণ্টা করে যখন শেষপর্যায়ে, তখন ওটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এর মাঝে আনন্দের স্মৃতিই বেশি। একবার এক ভাইয়াকে একটা আপুর ছবি এঁকে দিয়েছিলাম। তিনি যে কি খুশি হয়েছিলেন! কারণ ওই আপু ছিল ভাইয়ার প্রিয় মানুষ। আবার অনেকের পরিবারের সদস্যদের ছবি এঁকে নিয়ে যায়। ছবি দেখে তাদের মুখে যখন হাসি দেখি, তখন মনটা খুশিতে ভরে যায়।’ আপাতত আঁকাআঁকিতে ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছে আছে রাসেলের। আর্ট একাডেমিও খুলতে চান সামনে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তি ঐক্যবদ্ধ : মুফতি মোস্তফা কামাল

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্দুকধারীদের নির্বিচার গুলি, শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত

সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শুভ্রার

ঘুষ নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ / সাংবাদিককে গালি দিয়ে ভূমি কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্ট

কুয়াশা নিয়ে যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অফিস

নির্ধারিত সময়ের আগে অফিসে প্রবেশ, নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করল কোম্পানি

শহীদ শিহাবের কবর জিয়ারতে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির নেতারা

২-৪টা আসনের জন্য কারও সঙ্গে জোট করব না : নুর

‘আমাকে সাসপেন্ড করেন’ বলতে থাকা চিকিৎসককে অব্যাহতি

বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বিকল্প কেউ নেই : কায়কোবাদ

১০

গণতন্ত্র উত্তরণে খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা জরুরি : অমিত

১১

চিকিৎসায় অবিশ্বাস্য সাফল্য, ৩ দিনেই ক্যানসার থেকে সুস্থ হলেন নারী

১২

‘টাইম টু টাইম’ শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন ডা. জুবাইদা

১৩

বিএনপি সবসময়ই ‘পলিটিক্স অফ কমিটমেন্টে’ বিশ্বাসী : রিজভী

১৪

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৫

মির্জা আব্বাসের আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ভিপি সাদিক কায়েম

১৬

‘দেশের অগ্রযাত্রায় প্রবাসী তরুণদের জ্ঞান-প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে যুক্ত করতে হবে’

১৭

বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক চায় ভারত : প্রণয় ভার্মা

১৮

চায়ের দোকানে বিমান হামলা, নিহত ১৮

১৯

ববি ছাত্রদলের নেতৃত্বে মোশাররফ-শান্ত-মিজান

২০
X