কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ

দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ছবি: কালবেলা
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ছবি: কালবেলা

সারা দেশে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৩০ দিনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর দুই হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

সংগঠনটি জানিয়েছে, এসব সহিংস ঘটনার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বাধা, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, জোরপূর্বক পদত্যাগ। এসব সহিংসতার ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ঐক্য পরিষদের দাবি, ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়। যা এখনো চলছে। সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত; ২০১০টি। এ ছাড়া গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩২ দিনে ১৭৪টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮১ দিনে নতুন করে আরও ২৫৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা।

ঐক্য পরিষদ আরও জানায়, গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫০ জন হত্যা এবং ২৯ জন নারী সম্ভমহানির শিকার হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এ সময়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৭টি; নারী নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা ২০টি; উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ৫৯টি; ধর্মঅবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন ২১টি; বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ৮৭টি; জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ১২টি; শারীরিক নির্যাতন ও জোরপূর্বক পদত্যাগ চারটি; আদিবাসীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ১২টি; ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বাধা, অপহরণ ও বিবিধ ১৬টি; অর্থাৎ মোট সহিংসতার ঘটনা ২৫৮টি। এটি সামগ্রিক সহিংসতার একটি আংশিক চিত্র বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অস্বীকার করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি না করায় দুর্বৃত্তরা দায়মুক্তি পাচ্ছে। এর ফলে আপামর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আরও হুমকির মুখে পড়েছে, পড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশা করেছিল, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য, তাদের ওপর নিপীড়নসমূহ চিহ্নিত করে তা অবসানের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপের সুপারিশ করার জন্য আলাদাভাবে একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু আমরা প্রথমেই লক্ষ করলাম, সংখ্যালঘুদের জন্য কোনো আলাদা কমিশন গঠন করা হয়নি। পরবর্তীতে যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেখানেও ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমনকি সংবিধান সংস্কার কমিশনেও কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যসমূহ নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশনগুলো কোনো সংখ্যালঘু প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেনি।

ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, আমরা দেখছি সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের জন্য এটা সবচেয়ে হতাশার জায়গা। আমরা একসঙ্গে সবাই পথ চলতে চাই।

সংগঠনের অন্যতম আরেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বিভক্তি ও বিভেদ কারো জন্য সুখকর নয়। এটা জাতির অস্তিত্বের বিষয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে যে মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে, সেটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করেই বৈষম্য, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।

ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, প্রকৃতপক্ষে সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাকে উপেক্ষা করছে। আমরা ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও এর নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, জে এল ভৌমিক, রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক দিপংকর ঘোষ, পদ্মাবতী দেবী, সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাভুক্ত বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি রামানন্দ দাস, ঐক্য পরিষদের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য শিবু, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা মিঠুন ভট্টাচার্য শুভ, ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিপংকর চন্দ্র শীল প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির

অসুস্থ নারীকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বিআরডিবি কর্মকর্তা

এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় পিতৃহীন সুরাইয়াকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

গায়ানায় রাজ সাকিবের, শ্রীলঙ্কায় ভঙ্গুর বাংলাদেশ

শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি / মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

জবির ভূমিদাতা কিশোরী লালের শততম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শিক্ষকের ওপর হামলা, জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুলের পদ স্থগিত

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোবাইলে সারচার্জ বন্ধে হাইকোর্টে রিট

মাংসপেশিতে চোট জাকেরের

১০

জবিতে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ৩ দাবিতে বিক্ষোভ

১১

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ / দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

১২

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার কারাদণ্ড

১৩

ফিরেই ঝলক, সাকিবের ব্যাটে দুর্দান্ত ফিফটি

১৪

রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

১৫

গায়েবি মামলার আতঙ্কে ২০ গ্রামের মানুষ

১৬

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগজনক : মামুনুল হক

১৭

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল ফায়ার সার্ভিসের গাভি

১৮

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আ স ম রব

১৯

মহড়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় পুলিশের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

২০
X