শাওন সোলায়মান
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১০:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিটিসিএলের এমডির পদ সেই মতিনের জন্য খালি

অনিয়মের নানা অভিযোগ
বাঁ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ড. মোহাম্মদ রফিকুল মতিন। ছবি: সৌজন্য ছবি
বাঁ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ড. মোহাম্মদ রফিকুল মতিন। ছবি: সৌজন্য ছবি

প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অতিরিক্ত দায়িত্বের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড (বিটিসিএল)। নানা অনিয়ম আর অপকর্মের অভিযোগ নিয়ে গত জানুয়ারিতে অবসরে যান বিটিসিএলের শেষ পূর্ণকালীন এমডি ড. মোহাম্মদ রফিকুল মতিন। সেই থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে বিটিসিএলের দুজন কর্মকর্তা এমডি পদে আসীন হলেও পূর্ণাঙ্গ এমডি নিয়োগ হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক ভারপ্রাপ্ত নিয়োগের মাধ্যমে বিতর্কিত রফিকুল মতিনকেই আবারও এই পদে বসাতে চায় মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়। বিতর্কিত রফিকুল মতিনের অপেক্ষায় বিটিসিএলের এমডি পদ খালি রাখার বিষয়টি এখন একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’।

বিটিসিএলের এমডি পদে থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান ড. মতিন। ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পদে ছিলেন তিনি। প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে অতিরিক্ত দায়িত্বে বিটিসিএলের দুজন কর্মকর্তা এই পদে বসেছেন। তাদের একজন বিটিসিএলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি-করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) সঞ্জিব কুমার ঘটক এবং অন্যজন ডিএমডি-এসও আসাদুজ্জামান চৌধুরী। সঞ্জিব কুমার চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ হিসেবে বিটিসিএলের এমডির দায়িত্ব পালন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে এমডি হিসেবে আছেন আসাদুজ্জামান।

এদিকে চাকরি থাকাকালীন বিভিন্ন সময় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন রফিকুল মতিন। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের (বিটিটিবি) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী থাকাকালে দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনি। সে সময় সেনাবাহিনীর একটি কন্ট্রিবিউটরি কাজে ১ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৫ টাকা অগ্রিম উত্তোলন ও অনিয়মিতভাবে খরচের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ১৯৯৯ সালে এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও স্বভাব বদলায়নি রফিকুল মতিনের। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রফিকুল ২০১৯ সালে বিটিসিএলের এমডির দায়িত্ব পান। এই পদের দায়িত্ব নিয়েই বড় পরিসরের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিলে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ‘ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (এসটিএনপি)’ প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে রফিকুল মতিনসহ বিটিসিএলের সাবেক তিন কর্মকর্তা এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের সাবেক এক মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক নারগিস সুলতানা রফিকুল মতিনসহ ওই চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরিবর্তে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পান। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনের অভিমতে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহারে বিটিসিএল তথা সরকার ১০৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। অভিযুক্তরা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬-এর ৬৪(৩) ধারা, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এর ১২৭ বিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রফিকুল মতিনসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সূত্র বলছে, সমালোচিত ও বিতর্কিত এই রফিকুল মতিনকে আবার স্বপদে ফিরিয়ে আনতে তোড়জোড় চলছে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে। বিটিসিএলের একটি সূত্র জানায়, আজ্ঞাবহ রফিকুল মতিনকে বিটিসিএলের এমডি হিসেবে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে সেই শীর্ষ পর্যায় থেকে। অভিযোগ আছে, রফিকুল মতিনের মাধ্যমে বিটিসিএলে নিজেদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া সেই সিন্ডিকেট।

বিটিসিএলের শূন্য এমডি পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দৈনিক কালবেলাকে বলেন, আগের এমডিকেই (রফিকুল মতিন) নিয়োগ দেওয়ার বিষয় আছে। তিনি এর আগেও এমডি ছিলেন। যখন কেউ পিআরএলে (অবসর-পরবর্তী ছুটি) থাকেন তার বেতন-ভাতা কী হবে, এসব বিষয়ে মতামতের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। একবার তারা একটা মতামত দিয়েছে। আরও ব্যাখ্যার জন্য মতামত চাওয়া হয়েছিল; প্রক্রিয়া চলমান। এ বিষয়টি দেখভাল করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব; তিনি আবার বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। রফিকুল মতিনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়েরের সুপারিশের বিষয়ে জানা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, মামলা শুধু তার বিরুদ্ধে নয়, আরও চারজনের বিরুদ্ধে করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় আছে। এই মামলা পুরো বিভাগের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। কারণটা ছিল যে, সর্বনিম্ন দর প্রস্তাবকারীকে কাজ দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু যিনি সর্বনিম্ন দর প্রস্তাবকারী ছিলেন না তিনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কাজেই সেই মামলাকে আমলে নেওয়ার কারণ দেখি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া সেই নাহিদকে পদ দিল এনসিপি

যারা মাইনাস ফোরের কথা বলছেন তারা স্বৈরাচারের দোসর : প্রেস সচিব

সহজ সমীকরণ মিললেই বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা!

এক জেলার ২৪৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ

আইইউবিএটি ক্যারিয়ার ফেস্টিভ্যাল ২০২৫-এ অংশ নিচ্ছে দেশি-বিদেশি ১৩০ প্রতিষ্ঠান

জবিতে সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা ‎ ‎

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ৩১০ বাংলাদেশি

দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ

এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধীদের তালা

খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা

১০

কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদে তারেক রহমানের সহায়তা 

১১

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া পটুয়াখালীর ৪ শিক্ষককে বরগুনায় বদলি

১২

ভূমিকম্প থেকে আত্মরক্ষার দোয়া ও করণীয় আমল

১৩

খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়া নিয়ে স্পষ্ট বার্তা মির্জা ফখরুলের

১৪

ধানমন্ডিতে বাবার বাসা মাহবুব ভবনে গেলেন জুবাইদা রহমান

১৫

ব্রাজিলের ক্লাবের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ, খেলা দেখবেন যেভাবে

১৬

জবির প্রতিষ্ঠাতা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া

১৭

ববি ছাত্রদলের তিনটি পদে নির্বাচন শনিবার, লড়বেন ১০ প্রার্থী

১৮

মৃত্যুর ফেরেশতা কি প্রাণীদেরও রুহ কবজ করেন? জানুন

১৯

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে আমাদের শপথ : সালাউদ্দিন আহমদ

২০
X