ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ রোডম্যাপ প্রকাশ করেন। প্রকাশিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী রমজানের আগেই ভোট এবং ভোট গ্রহণের অন্তত ৬০ দিন আগে তপশিল ঘোষণা করা হবে। এবার প্রথমবারের মতো কারাবন্দিদের জন্য ভোটের পরিকল্পনা রেখেছে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন। তবে ভোট গ্রহণের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি।
রোডম্যাপে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দলগুলোসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত করা। এ ছাড়া নির্বাচনী আইনবিধি সংস্কার, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, পোস্টাল ভোটিং, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক অনুমোদন; নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যক্রম, অন্যান্য আইনবিধি সংস্কার একীভূতকরণ; ম্যানুয়েল নির্দেশিকা পোস্টার পরিচয়পত্র মুদ্রণ; প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স উপযোগীকরণ, নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দ, প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, বেসরকারি প্রাথমিক ফল প্রচার, ফল প্রদর্শন, প্রকাশ ও প্রচার (বিভিন্ন মাধ্যমে) রয়েছে রোডম্যাপের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর তালিকায়।
তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জগুলো কী, সে সম্পর্কে রোডম্যাপে সুনির্দিষ্ট করে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে ইসি সচিবের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটের আয়োজন করব। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার চেষ্টা করব; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি।’
ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে কমিশন, যা শেষ হতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস। এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত
জুলাই যোদ্ধারা।
জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। আর ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ নভেম্বর।
নির্বাচনী আইনবিধি সম্পর্কে রোডম্যাপে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), অন্যান্য আইনবিধি ৩১ আগস্টের মধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব ও প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা চূড়ান্ত, নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) ২০২৫ প্রতীকসহ, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯—এগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন, যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা কমিশনের।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সম্পর্কে বলা হয়েছে, মধ্য সেপ্টেম্বর প্রাথমিক নিবন্ধন এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন। আর সেপ্টেম্বরের শুরুতে আসন সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জিআইএস ম্যাপ প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে কমিশন।
পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও ট্র্যাকিং মডিউল, প্রচারণা অক্টোবরে সম্পন্ন হবে। প্রবাসে নভেম্বরে ব্যালট পেপার পাঠানো এবং কারাবন্দিদের ভোটের দুই সপ্তাহ আগে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেপ্টেম্বরে ও তপশিল ঘোষণার আগে ১৫ দিন এবং তপশিল ঘোষণার পরও বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
ইসি সচিব বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তপশিল ঘোষণার অন্তত তিন দিন আগে আসনভিত্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া নির্দিষ্টসংখ্যক ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।
তিনি জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আইন ও বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পাশাপাশি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে।
তপশিল ও ভোট কবে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ভোট গ্রহণের ৬০ দিন আগে তপশিল দেব। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলেছে, আগামী রমজানের আগে ভোট করার জন্য। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান শুরু। আবার রমজানতো চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। এভাবে আপনি নির্বাচনের তারিখ বের করতে পারেন।
গণপরিষদ ও গণভোটের দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো কিছু ভাবার সুযোগ নেই।
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা সম্ভব—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি ইসির দেখার কাজ নয়।
মন্তব্য করুন