বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, কিংবা ১৯৬৯ সালের গণভ্যুত্থান অথবা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব বাঁকবদলেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। যে কারণে একে অনেকেই ‘দ্বিতীয় সংসদ’ বলে থাকেন। তবে ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে কার্যত ঝিমিয়ে পড়া এই ‘সংসদের’ সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে, যদিও তা প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানান বিতর্কে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন এক আবহে আজ মঙ্গলবার হতে যাচ্ছে ৩৮তম ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, যা ১৯৯০ সালের পর দ্বিতীয়। বেশ কয়েকটি দিক থেকে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে এবারের নির্বাচন। যার মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থীর লড়াই এবং প্রথমবারের মতো প্রায় চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ভোটদান।
বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীদের ভিন্নধর্মী প্রচারণা, সৃজনশীল ইশতেহার ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ভোটযুদ্ধকে করেছে আরও রঙিন। ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু-একটি সংগঠনের মধ্যকার ঐতিহ্যগত দ্বন্দ্ব ছাপিয়ে এবারকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে ডাকসুর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, দেশের জাতীয় রাজনীতির জন্যও আজকের দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে ডাকসু। এমন নির্বাচনী পরিবেশ, ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সর্বাধিক প্রার্থীর অংশগ্রহণ—সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন ভিন্ন এক আবহ তৈরি করেছে। বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে হয়তো নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোয়ার। বাস্তবিক অর্থেই নেতৃত্ব তৈরির জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। আশা করি, এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য হবে।’
এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানও। তিনি বলেন, ‘বহু বছর পর আমরা একটা ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। ডাকসু নির্বাচন সমগ্র জাতির জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে। যদিও এই নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, তার পরও এটির জাতীয় গুরুত্ব আছে। আগামীকাল (আজ) সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভারিভাবে বললে ঐতিহাসিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যা আগে ঘটেনি।’
তপশিল অনুযায়ী, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন, যা ডাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে নারী ৬২ জন। অন্যদিকে, ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও ছাত্র অধিকার পরিষদ আলাদা প্যানেল দিয়েছে। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচন করছে দুটি প্যানেলে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে প্যানেল রয়েছে ১০টির মতো।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৮৭৩ এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের ডাকসু ও হল সংসদের মোট ৪১টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা চলবে এই ব্যালট যুদ্ধ। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে গণনা শুরুর পর ফল প্রকাশ করবে। একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই সব কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গণণা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনে ফল গণনা প্রদর্শিত হবে। সবশেষে সিনেট ভবন মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের মোট ফল ঘোষিত হবে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ৮টি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি থাকছে মোবাইল প্যাট্রল, ডগ স্কোয়াড, বিশেষায়িত টিম, বোম এক্সপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডিবি (সাদা পোশাকে), সিসিটিভি মনিটরিং সেল এবং স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স।
আলোচনায় যারা: এবারের নির্বাচনে ১০টি প্যানেল ও বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মূলত তিনটি প্যানেল নিয়ে হচ্ছে বেশি আলোচনা। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাগছাস সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে বিভিন্ন জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে উমামা ফাতেমা ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীও আলোচনায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিপি পদে শামীম হোসেন, জিএস পদে আরাফাত চৌধুরী এবং এজিএস পদে তাহমীদ আল মুদাসসীর চৌধুরীর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
গতকাল পর্যন্ত চারটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটিতে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল, একটিতে ছাত্রদল এবং অন্যটিতে এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব জরিপের ফলে শিবিরের প্রার্থী সাদিক কায়েম, ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান, বাগছাসের আব্দুল কাদের এবং উমামা ফাতেমা, বিন ইয়ামীন মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনের নাম উঠে এসেছে। জিএস পদে বাগছাসের আবু বাকের মজুমদার, ছাত্রদলের তানভীর বারী হামিম, ছাত্রশিবিরের এসএম ফরহাদ, বাম জোটের মেঘমল্লার বসুর নাম আলোচনায় এসেছে।
ঢাবি গবেষণা সংসদের জরিপে ভোটদানে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দেবেন বলে জানান। এর পরই রয়েছে ছাত্রশিবির। ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী শিবিরকে ভোট দেবেন বলে মতামত দেন। ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রদল, ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য এবং ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বাগছাসকে ভোট দেবেন বলে জানান। তবে এসব জরিপকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ফলের নেপথ্যে যেসব সমীকরণ : এবারের নির্বাচন হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। আগেভাগে জয়ী নির্ধারণ করা (পূর্বানুমান) কঠিন হলেও নারী ভোটার, অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও সংখ্যালঘু ভোটাররাই শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয়ের সমীকরণে পার্থক্য গড়ে দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। মোট ভোটারের ৪১ শতাংশ অনাবাসিক। আর সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ১০ শতাংশ, সংখ্যায় যা প্রায় ৪ হাজার। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিগত ডাকসু নির্বাচনেও নারী ভোটারদের ভোট যারা বেশি পেয়েছেন, তারাই জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া জগন্নাথ হল এবং ছাত্রীদের পাঁচটি হলের প্রায় ৪ হাজার সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীও জয়-পরাজয়ের সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ভোটের পাল্লা যেদিকে বেশি ঝুলবে, সেসব প্রার্থীই অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। অন্যদিকে মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই অনাবাসিক শিক্ষার্থী। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পাননি। তাদের অনেকেই ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক আবহ থেকে থাকেন অনেকটাই দূরে। এসব ভোট যারা টানতে পারবেন, তাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
গতকাল ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র আটবার এই নির্বাচন হয়েছে। অনেক প্রশাসন এমন আয়োজন করতে আগ্রহী থাকে না। কিন্তু আপনারা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জিতুন বা হারুন, সেটিই হবে আপনাদের বড় অবদান। তাই একে অপরের প্রতি সহনশীল হোন। হার-জিত যাই হোক, আমাদের মধ্যে এমন কিছু নেই যাতে বড় কোনো সংঘাত তৈরি হয়। যদি তবু কেউ আইন ভঙ্গ করে, তবে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জাল: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আজ ভোটের দিন ২০৯৬ জন পুলিশ সদস্য, ডগ স্কোয়াড, সোয়াত টিম, বিশেষায়িত টিম ও সাদা পোশাকে ডিবির সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী। তিনি বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
ডিএমপি কমিশনার জানান, গতকাল রাত ৮টা থেকে আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরাও ঢাবি ক্যাম্পাসে অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
ডাকসুর ইতিহাস: ১৯২১ সালের ১ জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই স্যার এ. এফ. রহমানের উদ্যোগে তিন আবাসিক হলে (মুসলিম হল, জগন্নাথ হল ও ঢাকা হল) ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯২২-২৩ সালে গঠিত হয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। অবশ্য শুরুতে একে ‘ডাকসু’ নামে ডাকা হতো না। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ থেকে তিন দশক পর নামকরণ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ১৯৪৪-৪৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদের নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে। এই গঠনতন্ত্রের অধীনে ১৯৪৫-৪৬ সালে উপাচার্য পি জে হার্টগ পদাধিকারবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি হন। ছাত্রদের মধ্যে থেকে সহসভাপতি হন আহমেদুল কবির এবং সাধারণ সম্পাদক হন সুধীর দত্ত। পরের বছরেও এই সংসদ থেকে যায়, তবে আহমেদুল কবির পদত্যাগ করায় ফরিদ আহমদ সহসভাপতি হন।
অতীতের ডাকসু নির্বাচন : ১৯২৩ সালে যাত্রা শুরুর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে সহসভাপতি হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর এবং বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৯ বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে মাত্র ৭ বার। ১৯৯১ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন যেন অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক হন মাহবুবুর জামান। ১৯৯০ সালের পর ১৯৯১ সালের ১৮ জুন ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় সহিংসতার কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ ডাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছিলেন; কিন্তু ছাত্রলীগের বিরোধিতার কারণে নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী উপাচার্য হওয়ার পর একাধিকবার ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেন, কিন্তু তা আর শেষমেশ বাস্তবায়িত হয়নি। মাঝেমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন এবং সিনেটে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও এসেছে। তবে তাতে কোনো ফল মেলেনি। ২০০৫ সালে তপশিল ঘোষণা হলেও ছাত্রলীগের বিরোধিতায় নির্বাচন হয়নি। তখন ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করলেও ছাত্রলীগের প্রতিরোধের কারণে তাদের দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ২০১২ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, ধর্মঘট, কালো পতাকা মিছিল এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান। লাগাতার আন্দোলন চলে বেশ কিছুদিন। শেষে ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ বিরতির পর সে বছর ডাকসু নির্বাচন হলেও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের কারণে তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
মন্তব্য করুন