কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মরক্কোর আল হাউস ধ্বংসস্তূপ

ভূমিকম্পে নিহত ১ হাজার ৩০৫
মরক্কোর আল হাউস ধ্বংসস্তূপ

চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। আহতদের করুণ চাহনি, আর স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে মরক্কোর উচ্চ এটলাস পর্বতমালা ও তার পার্শ্ববর্তী প্রদেশ আল হাউস। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাত ১১টার কিছু পরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৫। এ ছাড়া আহত হয়েছে অন্তত ১৮শ। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এখনো আটকা আছে অসংখ্য মানুষ। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।

ভূমিকম্পে ধসে পড়া বাড়ির নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং বাঁচাতে হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও সিএনএনের।

গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পর্যটন শহর মারাকেশ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলো থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গভীর শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, রাশিয়া, ইউক্রেন ও আফ্রিকান ইউনিয়নের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিবৃতিতে বলেন, যে কোনো সহায়তা দিতে তার প্রশাসন প্রস্তুত। পুতিন ও জেলেনস্কি আলাদা শোকবার্তায় সমবেদনা জানিয়েছেন।

এদিকে ভূমিকম্পে আহতদের চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। রোগীর সঙ্গে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হাসপাতালের পরিবেশ। দেখা দিয়েছে তীব্র রক্ত সংকট। রক্তদান কেন্দ্রে স্থানীয়দের লম্বা লাইন দেখা গেছে। যে যার মতো এগিয়ে আসছেন সহায়তায়। মরক্কোর রাবাত থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হাসান আলাউই জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যবশত আরও দুঃখজনক খবর হয়তো আমরা পেতে পারি। এই মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে, তা অনুমান করা কঠিন। কারণ কয়েকটি প্রদেশে আঘাত হানায় হতাহতের সংখ্যা নিরূপণ করা যাচ্ছে না এখনই।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এটির স্থায়িত্ব ছিল ২০ সেকেন্ড। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল এটলাস পর্বতমালার ওকাইমেডেনের স্কি রিসোর্টের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। এটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর মারাকেশ থেকে ৭৫ কিলোমিটার (৪৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। মরক্কোর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান লাহসেন মান্নি জানান, বেশ কয়েকবার পরাঘাত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ৫ মাত্রার। মরক্কোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জিওফিজিক্সের প্রধান বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি দেশটির এক শতাব্দীর ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরোনো মারাকেশ শহর ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। রাতের আঁধারে ভূমিকম্প হওয়ায় এখনো পুরোপুরিভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি। মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আল-আওলা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর আশপাশের সড়কগুলো ভেঙে গেছে বা ধ্বংসস্তূপ পড়ে আটকে গেছে। এ কারণে উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

মারাকেশের চিকিৎসক ডা. হেশাম খারমৌদি বলেন, শহরে আহতের সংখ্যা বাড়ছেই। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন এই দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত আছেন। কিন্তু আমাদের এখন একমাত্র সমস্যা হলো রক্তের ব্যাগের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা মানুষকে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছি।

মারাকেশের বাসিন্দা আবদেলহাক এল আমরানি (৩৩) বলেন, ভূমিকম্পে অসংখ্য পুরোনো ভবন ধসে পড়েছে। আমরা হঠাৎ প্রচণ্ড কম্পন অনুভব করি। এর পরই বুঝতে পারি, ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভবনগুলো কাঁপছে দেখে আমি বাইরে বেরিয়ে যাই এবং দেখি যে অনেকেই সেখানে আছে। লোকজনের চোখেমুখে আতঙ্ক। শিশুরা ভয়ে কাঁদছিল। প্রায় ১০ মিনিট বিদ্যুৎ ছিল না।

মারাকেশের আরেক বাসিন্দা জাওহারি মোহাম্মদ পুরোনো শহরটির বাড়িঘরও অনেক পুরোনো। এখানে যদি একটি ঘর পড়ে যায়, তাহলে সেটির কারণে আরেকটিও পড়ে যাবে। মরক্কোর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তারৌদন্তের কাছের একটি এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক হামিদ আফকার বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়ি থেকে দৌড়ে বের হয়ে যান।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভূমিকম্পে পার্বত্য অঞ্চলে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এসব এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর মারাকেশের আতঙ্কিত বাসিন্দারা খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছেন। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনার অন্তর্ভুক্ত দেশটির পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী মারাকেশ শহরের ভবনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই শহরের প্রাণকেন্দ্র জেমা আল-ফনা স্কয়ারের একটি মসজিদের মিনার ধসে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করছেন।

ভূমিকম্পে আহতদের শতাধিক স্বজনকে দেখা গেছে মারাকেশের স্থানীয় একটি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করতে। মারাকেশের হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ আহতই শহরের বাইরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে এসেছেন। স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় তাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে।

মারাকেশ থেকে সিএনএনের এক কর্মী জানান, তারা সবাই প্রথমে ঝাঁকুনি অনুভব করেন। এরপর দ্রুত নিচে নেমে আসেন। নিচে নেমে দেখেন অনেক মানুষ রাস্তায়। দ্রুত বাইরে চলে আসা মানুষ প্রথমে বুঝতে পারেননি কী হয়েছে। কিন্তু একটু পর সেখানে আর্তনাদ শুরু হয়। কারণ অনেকে দেখতে পান, তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা গুরুতর জখম হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা এত বেশি আর গুরুতর ছিল যে, সবাইকে চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর জায়গা না থাকায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২৭ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৭ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা 

আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ

২৭ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান কিটোনকে সংবর্ধনা দিল এ্যাব

মাছ ধরার নৌকায় মিলল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা, আটক ৯

ভোলায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল / এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

যৌথবাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের ২ সদস্য আটক

জেলেরা হেলমেট পরে মাছ ধরেন যেখানে

১০

বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

১১

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

১২

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

১৩

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

১৪

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

১৫

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

১৬

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

১৭

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১৮

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

১৯

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

২০
X