কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভুয়া বিলের কারিগর মিঠু বিদেশে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা

মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কেনাকাটা
ভুয়া বিলের কারিগর মিঠু বিদেশে পাচার করেছেন শতকোটি টাকা

সরকারি অর্থ লোপাট আর দুর্নীতির এক আলোচিত নাম মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কেনাকাটায় ছিল তার দীর্ঘদিনের প্রভাব। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও বাদ যায়নি।

মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ—যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে একের পর এক বিল তুলেছেন তিনি। শুধু নিজের নামে নয়, তার মালিকানাধীন একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও এই কাজ করেছেন। এসব বিল উত্তোলনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। এই অর্থের একটি বড় অংশ তিনি পাচার করেছেন বিদেশে।

২০১৬ সালে আলোচিত পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে মিঠুর নাম উঠে আসে। শুধু তিনি নন, তার বড় ভাই মোকসেদুল ইসলাম হিরু এবং ভাগিনা বেনজির আহমেদের নামও সেই তালিকায় ছিল। তদন্তে জানা যায়, তারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচার করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি, গাড়ি ও বিলাসবহুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

স্বাস্থ্য খাতে মিঠুর অপকর্ম দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় তিনি এই দুর্নীতির জাল বিস্তার করেন। বিভিন্ন সময় ভুয়া বরাদ্দ ও কাগজপত্র তৈরি করে অর্থ উত্তোলনের ব্যবস্থা করতেন তিনি। এরপর সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়াই ঢাকা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস থেকে চেক তুলতেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১২ সালের জুনে একটি স্মারকের মাধ্যমে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। আবার ২০১৩ সালে বরাদ্দ হয় ৯ কোটি, ২০১৮ সালে ১৫ কোটি এবং অন্যান্য বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বরাদ্দ আসে। এসব অর্থ সাধারণত সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে তোলার কথা। কিন্তু মিঠুর জন্য সেই নিয়মের প্রযোজ্যতা ছিল না। তিনি ঢাকায় বসেই উত্তোলন করেছেন বিল, কোনো পণ্য বা যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই।

তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে—ক্রিয়েটিভ ট্রেড, ফিউচার ট্রেড, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ, ইনভেনচার ও আরডেন্ট সিস্টেম। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে শতকোটির বেশি টাকার সরঞ্জাম ‘সরবরাহের’ নামে ভুয়া বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

পানামা পেপারসের তথ্যমতে, মিঠু ও তার পরিবারের সদস্যরা এই অর্থ বিদেশে পাচার করে স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিঠুর ৫০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দ করে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশ-বিদেশে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।

এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নড়েচড়ে বসে। গঠিত হয় তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল। মিঠুর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, আদালত পর্যন্ত গড়ায় মামলা। কিন্তু মাঝপথেই সেই অনুসন্ধান থেমে যায়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ থেকেও তাদের সম্পদের বিষয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি মিঠুর। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও নজরদারির পর গত ১০ সেপ্টেম্বর গুলশান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখনো তার সহযোগীদের অনেকেই পলাতক।

সরকারি অর্থ লোপাট, স্বাস্থ্য খাতকে জিম্মি করা, বিদেশে সম্পদ পাচার—মিঠুর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, তার নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখন সময়ের দাবি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এডিএ অ্যাপে প্রতারণা, নারী গ্রেপ্তার

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ইলিয়াস কাঞ্চনের আরোগ্য কামনায় শাকিব খানের দোয়া

হলিউডের জনপ্রিয় গায়িকার সঙ্গে ট্রুডোর অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস

জবির ছাত্রী হল ও শহীদ সাজিদ ভবনের নামফলক স্থাপন

বাতিল হতে পারে আর্জেন্টিনার ভারত সফর!

সারাক্ষণ ফোন চার্জে রেখে ভুল করছেন না তো?

গাজাবাসীর সহায়তা মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিল পুনাক

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন

শিশুর সুরক্ষায় জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচিতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন

১০

ব্যাংকিং টিপস / নিরাপদ থাকতে হালনাগাদ রাখুন তথ্য

১১

প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে জাগপা

১২

চাকসু নির্বাচনে দ্রোহ পর্ষদ প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৩

ঢাবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে আশিক-রাফি

১৪

গাজা শহরকে নতুন করে নির্মাণ করতে কতদিন সময় লাগবে?

১৫

ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৫৩

১৬

চবির ভর্তি পরীক্ষা ২ জানুয়ারি

১৭

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ২ নেতা গ্রেপ্তার

১৮

নতুন বউ নিয়ে ঘরে প্রবেশের পরই ডাকাতের হানা, স্বর্ণালংকার লুট

১৯

৩ দাবিতে কাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি

২০
X