যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কোনো লবিস্ট নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় তিনি জানান, ব্রিকস আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানালে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ। এর আগে গত ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেনেভা সফরকালে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী আগস্টে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে পারে—এমন আভাস দিয়ে বলেছিলেন, এটা বাংলাদেশের অর্থায়নের আরেকটি ক্ষেত্র হবে।
ঢাকায় ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানালে স্বাগত জানাবে সরকার। তবে এখনো এ ব্যাপারে ব্রিকস থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি আসেনি।
ব্রিকসের সদস্য ৫ দেশকে নিয়ে ২০১৫ সালে ব্রিকসের নিজস্ব ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। পরে এর নাম বদলে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক করা হয়েছে। ব্যাংকটিতে ২০২১ সালে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দেয় বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। ব্যাংকের পাশাপাশি ব্রিকসেও বাংলাদেশকে যুক্ত করতে চাইছে জোটের নেতারা। ২২-২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ২২ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে ঢাকা, ওয়াশিংটন ও দিল্লির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকার কীভাবে দেখছে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত অত্যন্ত পরিপক্ব গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী দেশ। তারা যা ভালো মনে করবে সেটাই আলাপ করবে। সেখানে আমাদের ওকালতি করার দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি নিরসন করে ড. মোমেন বলেন, ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় একটি সম্মেলনে চীন প্রধানমন্ত্রীকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকবেন। তাই চীনে যেতে পারবেন না বলে দেশটিকে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের বানারসে জি-২০ মন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা জি-২০ সদস্য না হয়েও ভারতের আমন্ত্রণে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নিচ্ছি। ভারত সরকার আমাদের অত্যন্ত সম্মান দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট বাদ দিয়েছে সরকার : এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কোনো লবিস্ট নেই দাবি করে বলেন, সেখানে আমাদের কোনো লবিস্ট নেই, আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি। সেখানে যারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তাদের বলেন, যেন আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটাকে ধ্বংস করার তালে না থাকেন। আপনারা বরং দেশে আরও জ্বালানি কীভাবে আনা যায়, কীভাবে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হয়, বিনিয়োগ বাড়ে কীভাবে সেজন্য লবিস্ট নিয়োগ করেন। তাহলে দেশের মঙ্গল হবে। দেশ তো আপনার-আমার, সবার।
সরকারবিরোধীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা অপজিশনে আছেন, তাদেরও দেশটা। সুতরাং দেশকে ধ্বংস করে লাভ নেই। কারণ এটাতে সবার ক্ষতি। সেজন্য দেশের মঙ্গলের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করুক।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে তথ্যে ভুল ও গরমিল আছে দাবি করে ড. মোমেন বলেন, কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে একটা তথ্য আছে, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে গত কয়েক বছরে ৬০ শতাংশ হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আরও বলা হয়েছে, খ্রিষ্টানদের ওপর অত্যাচার করা হয়। এটা তো ঠিক নয়।
মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা উচিত। এমন ভুল তথ্য দিয়ে কেমন করে চিঠি দেয়? তাদের চিঠি চালাচালি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের সরকারকে তারা লিখেছে। তবে মিথ্যা তথ্য দিলে খারাপ লাগে।
সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়, এমন মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলেই সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন হবে না, সব দলকেও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইতে হবে। সব দল প্রতিজ্ঞা করুক, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচনে যোগ দেবে।
মন্তব্য করুন