পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বর্তমানে দেশে চকচকে অর্থনীতি আছে; কিন্তু গভীরতা কম। সামান্য বাতাসে এটি কেঁপে ওঠে। এখন অর্থনীতির গভীরতা বাড়াতে হবে। অর্থনীতির গভীরতা বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হবে। আমরা সেই কাজটাই করব, যেটা করলে অর্থনীতির গভীরতা বাড়ে। গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীর এক হোটেলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন এবং প্রকল্পটির সিনিয়র কনসালট্যান্ট বিকাশ কিশোর দাস।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভারতের অর্থনীতি সামান্য ধুলা-বাতাসে কেঁপে ওঠে না। কারণ, তাদের অর্থনীতির গভীরতা অনেক। আমাদের থেকে তাদের অর্থনীতির গভীরতা প্রায় ৫০ গুণ আর মানুষের গুণতিতে প্রায় ১২ গুণ। এ কারণে হাওয়ার দোলাটা তাদের একটু কম লাগে। তিনি বলেন, ভারতের এই অর্থনীতি এক দিনে হয়নি। শতবর্ষের প্রচেষ্টায় হয়েছে। আমরাও সেই প্রচেষ্টায় আছি। আমাদের অর্থনীতিতে ওপরে যথেষ্ট চাকচিক্য এসেছে। এখন গভীরতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ভয়ংকর মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুতের সমস্যা। এটি মোকাবিলা করতে হবে। মোকাবিলার জন্য কিছু কৌশল ঠিক করা হয়েছে। খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে হবে। কৌশলগুলোর মধ্যে প্রধান উদ্দেশ্যই হলো ডলার বাড়ানো। অধিক পরিমাণে মার্কিন মুদ্রা আয় করতে হবে এবং জমাতে হবে।
কর্মশালার মুক্ত আলোচনায় বিবিএসের অংশীজন বলেন, বিবিএসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কারণ, তাদের ডাটা গ্যাপ অনেক বেশি। বিকেন্দ্রীকরণ করলেই হবে না। স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
ড. শামসুল আলম বলেন, বিবিএস যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করছে। মূল্যস্ফীতি বেশি হলেও প্রকাশ করে আবার কম হলেও প্রকাশ করে। আমরা কোনো চাপ দিই না। বিবিএস অনেক সঠিক ও সময়সাপেক্ষ তত্ত্ব দিচ্ছে। এখন অত্যন্ত গতিশীলভাবে কাজ করছে বিবিএস। যারা গবেষণা করেন তারা বুঝতে পারেন। আমাদের ডাটা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তুলনীয়।
আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন অংশীজন হিসেবে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিয়ে আসছে। নীতিমালা প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। এক দেশ এক তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে শুদ্ধ, সঠিক ও সময়মতো তত্ত্ব তুলে আনতে হবে। সময় সময় এনএসডিএস আপডেট করা হয়েছে।
ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, বিবিএসের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তার পরও যথা সময়ে সঠিক তত্ত্ব দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সঠিক তথ্য শুধু চাইলে হবে না। এটি পেতে কি ধরনের কৌশল দরকার, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মশালায় জানানো হয়, পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সুদৃঢ় ভিত্তি দিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ ৪২ বছর পর পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের ধারা-৬-এ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডেভেলপমেন্ট অব স্ট্যাটাসটিকস (এনএসডিএস) প্রবর্তন ও সময় হালনাগাদ করার কথা উল্লেখ আছে।
মন্তব্য করুন