জোটগত মনোনয়নে ২০১৮ সালের তুলনায় আসন সংখ্যা কমে যাওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন ১৪ দলের শরিকরা। তার ওপর নির্ধারিত আসনগুলোয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে আওয়ামী লীগের অনীহার কারণেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তারা। তবে জোটের প্রধান দল হিসেবে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত এসব বিষয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে বলে এখনো আশা করছেন শরিক দলের নেতারা।
বিগত তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও জোটগতভাবেই ভোট করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। জোট শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে গত কয়েকদিন বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার ৭টি আসন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে ৩টি করে এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-৩, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ ও মোস্তফা লুৎফুল্লা সাতক্ষীরা-১ আসনে জোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪ ও মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে জোটের প্রার্থী হচ্ছেন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ আসনে আগে থেকেই কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। বাকি আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মোট ১৬টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল ১৪ দল। এবার সংখ্যাটা একই রকম থাকবে বলে আশা করেছিলেন তারা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় মনঃক্ষুণ্ন শরিকরা। এ ছাড়া আগের নির্বাচনগুলোতে বঞ্চিত হলেও এবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলেন একাধিক শরিক দলের শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে আশাহত হয়েছেন তারা।
সূত্র জানায়, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ফেনী-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য। এবার এই আসনে ছাড় না দেওয়া দলটির ক্ষোভের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আরও চারটি আসনে এবার জোটের মনোনয়ন আশা করেছিল জাসদ। সেগুলো হলো বরিশাল-৬ মো. মোহসীন, ময়মনসিংহ-৬ সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৩ নূরুল আখতার এবং গাইবান্ধা-৪ খাদেমুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোটের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরই এক ভিডিওবার্তায় এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। শরিকদের অবহেলা করা আত্মঘাতী হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আমির হোসেন আমু যে প্রস্তাব করেছেন, এটা প্রাথমিক। আমরা তা গ্রহণ করিনি। পুনরায় বিবেচনা করার জন্য শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়েছি। আমরা মনে করি আসন বৃদ্ধি করা দরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলে নেওয়া দরকার।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে হাসানুল হক ইনু কালবেলাকে বলেন, ‘জোটের আসন বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছি। জোটপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গেও আলোচনা চলছে, তবে কোনো উত্তর পাইনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারের যে দাবি ছিল, সেটাও পূরণ হয়নি। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
অন্যদিকে জোটের কাছে পাঁচটি আসন আশা করলেও বর্তমান সংসদ সদস্যদের কাউকে বাদ না দেওয়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষোভ কিছুটা কম। তবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আরও দুটি আসন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালবেলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আওয়ামী লীগকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। দেখি কী হয়।’
এদিকে গত দুটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তবে এবার এই আসন ছাড়ার ঘোষণা দেয়নি আওয়ামী লীগ। অবশ্য নিজের আসন ‘নিশ্চিত হয়েছে’ বলে দাবি করেছেন সৈয়দ নজিবুল বশর। গতকাল শুক্রবার তিনি কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম-২ আসনে ছাড়ের বিষয়ে গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আসন বণ্টন ঘোষণার পরও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।
এদিকে জোটগত মনোনয়নের পাশাপাশি এসব আসনে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করা নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছেন ১৪ দলের শরিকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ালে জোটের প্রার্থীরা বেকায়দায় পড়তে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে তাদের নির্বাচন করতে দেওয়ার পক্ষে দলের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, ‘১৪ দলের শরিকদের জন্য সাতটির বেশি আসন ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। শরিকদের কাউকে নির্বাচনে বিজয়ের গ্যারান্টি দেবে না আওয়ামী লীগ। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই বিজয়ী হতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, ‘জোটের শরিকদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনার সময় শেষ হয়ে যায়নি।’