নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলাকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ হস্তক্ষেপ মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য কোনো দেশ যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলে, আমরা সেটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মনে করি না। এ ধরনের আলোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ এটা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।’ তার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে, সে প্রেক্ষাপটে এ সফরকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে যেসব তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের দিক থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইটারে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, সেটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল।’ সোমবার ব্রিফিংয়ে মিলারের কাছে জানতে
চাওয়া হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের এমন অবস্থানকে অন্য দেশের প্রতি হস্তক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছে রাশিয়া, চীন ও ইরান। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন। জবাবে মিলার বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ার জন্য কেউ সমালোচনা কেন করবে, এটা আসলেই আমি জানি না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রেরও চাওয়া এটাই।’
ম্যাথু মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না, প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য কোনো দেশ যখন কথা বলে, তখন আমরা সেটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখি না। সেই আলোচনাকে স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ করার পথে সুযোগ হিসেবে দেখি। আমরা আসলেই জানি না, অন্য কোনো দেশের এ বিষয়ে আপত্তি জানানোর কী আছে।’
ব্রিফিংয়ে উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুর সফর নিয়েও মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাকে প্রশ্ন করা হয়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে তারা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না। জবাবে মিলার বলেন, ‘১১ থেকে ১৪ জুলাই আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা সংকট, শ্রম সমস্যা, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইসহ বিভিন্ন মানবিক উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন। তিনি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে (ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ) মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন ও শ্রম অধিকার, সুশাসন এবং গণতন্ত্র নিয়েও কথা বলবেন।
মন্তব্য করুন