ওয়াফাদার মোমান্ডকে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। অন্য পাশ থেকে এসে তরুণ এ ব্যাটারকে পিঠ ছাপড়ে দিলেন সাকিব আল হাসান। তাদের উদযাপনে বাড়তি কোনো আমেজ চোখে পড়েনি। স্বাভাবিক ম্যাচের মতোই উপভোগ করেছেন সাকিব-শামীমরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জিতেছেন তারা। ২-০ ব্যবধানে জিতে টানা চারটি সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের পর এবার আফগানদেরও হারাল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছর এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়। এক বছরে এর চেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ একবারই, ২০২১ সালে। তবে সেই বছর ১১ জয়ের পাশে হার ছিল ১৬ ম্যাচে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ৭ ম্যাচ জিতলেও হার ছিল ৮টিতে। সেসব পরিসংখ্যানের দিক থেকে এ বছর মাত্র ৮ ম্যাচ খেলেই নতুন রেকর্ড গড়েছেন সাকিবরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে সমানে সমান ম্যাচ জেতার রেকর্ড হয়েছে অধিনায়ক সাকিবের (১৬)। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর হওয়ায় এ জয় হয়তো খুব একটা গুরুত্ব বহন করবে না। তবে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। কেননা, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে লম্বা সময় ধরেই খারাপ সময় পার সাকিব-লিটনরা যে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। পরপর চার সিরিজ জেতায় এবার হয়তো কিছুটা হলেও তার স্বস্তি পাবেন তারা। শুধু ম্যাচ জেতাই নয়, খেলোয়াড়দের মানসিকতায়ও পরিবর্তনের দেখা মিলেছে। ২০২৪ বিশ্বকাপ সামনে রেখে এভাবেই খেলা এগিয়ে নিতে চাইবেন সাকিবরা। সিরিজ শুরুর আগেই পরিসংখ্যানে ঢের এগিয়ে ছিল আফগানরা। সিলেটের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে জয়ের রেকর্ডও ছিল না সাকিবদের। সব কিছুতে পিছিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সাকিব। সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলেন, ফেভারিট কে সেটা আপনারা বেছে নেন। আমরা চাই দুই ম্যাচেই জিততে। প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচ—সাকিব যা চেয়েছেন, তা-ই করে দেখিয়েছেন। এবার নিজেদের সামনের দুটি বড় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত করার কথা বলেছেন তিনি। আফগানদের ১১৮ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়ায় দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমবার ওপেনিং করা আফিফ হোসেনকে নিয়ে স্কোর বোর্ডে ৬৭ রান যোগ করেন লিটন দাস। এক বলের ব্যবধানে লিটন ফেরেন ৩৫ রানে এবং আফিফ ২৪। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত সাজঘরে ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে ব্যবধানটা চাপের না হলেও আফগান বোলিংয়ের সামনে চাপের মতোই ছিল তা। উইকেটে তখন তাওহীদ হৃদয় ও সাকিব। বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান বেড়েই চলছিল। গ্যালারি থেকে শোনা যাচ্ছিল, ‘সাকিব, সাকিব, সাকিব’। সমর্থকদের ডাক পেতেই লং অনের ওপর দিয়ে রশিদ খানকে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান সাকিব। ঠিক সময়মতো ছক্কা মারায় ক্রিকইনফোর স্কোরার লিখেছিলেন, ‘অ্যান্ড দ্য কিং রেসপন্স পারফেক্টলি।’ শেষ পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন সাকিব। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক। ম্যাচসেরার সঙ্গে সিরিজসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। পুরস্কার নিতে এসে বাংলাদেশ অধিনায়ক যেমনটা বলেছিলেন, ‘আজ (গতকাল) আমি ও কোচিং স্টাফ চেয়েছে তরুণরা বেশি সময় কাটাক এবং কাজ শেষ করে আসুক। এরপর (অবশ্য) আমাকে আসতে হয়েছে। আশা করি, এ জয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাস সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে কাজে দেবে।’ ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতে আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টিতে উইকেট শিকারের ফিফটি পূর্ণ করেন তাসকিন আহমেদ। আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইকেও ফেরান তিনি। এরপর সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমানদের বোলিংয়ে অল্প রানেই আটকে যায় সফরকারীরা। সহজ লক্ষ্য পেয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।
মন্তব্য করুন