মহান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত পানি। পানি ছাড়া মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। বলা হয়, পানির অন্য নাম জীবন। জীবনধারণে পানির বিকল্প নেই। বিশ্ব প্রকৃতি ও মানুষ সৃষ্টিতেও আল্লাহ পানি ব্যবহার করেছেন। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবুও কি তারা ইমান আনবে না?’ (সুরা আম্বিয়া: ৩০)। আরও বলেন, ‘তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরাই কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আনো, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোরো না?’ (সুরা ওয়াকেয়া: ৬৮-৭০)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের জীবিকা তথা ফলমূল তৈরিতে পরিমাণমতো পানি দান করে থাকেন, যা ছাড়া কোনো ফলমূল উৎপন্ন হতো না।
আল্লাহতায়ালা পানিকে শুধু মানুষের পান করার চাহিদা মেটানোর জন্যই তৈরি করেননি। পানিকে করেছেন সৃষ্টির বিভিন্ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। মানুষের খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই মানুষের জন্য ইবাদত হবে, যখন এসব ইসলামী পদ্ধতিতে করা হবে। পানি পানেও রয়েছে কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি। এ নিয়ম পালন করলে যেমন সুন্নতের সওয়াব অর্জিত হবে, তেমনি পার্থিব কল্যাণও মানুষ লাভ করবে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত—তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর কাছে একটি পেয়ালা আনা হলো। তিনি তা হতে পান করলেন। তখন তার ডানদিকে ছিল একজন বয়োকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তার বামদিকে। তিনি বললেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট পানিটুকু বয়স্কদের দেওয়ার অনুমতি দেবে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছে থেকে ফজিলত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করলেন। (মুসলিম: ২০৩০)।
পানি পানের আরও কিছু সুন্নত রয়েছে। যথা—১. ডান হাতে পান করা। কেননা শয়তান বাম হাত দিয়ে পানি পান করে; ২. বসে পান করা, দাঁড়িয়ে পান করা নিষেধ; ৩. শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ পড়া; ৪. তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা, নিঃশ্বাস ফেলার সময় গ্লাস থেকে মুখ আলাদা করা; ৫. গ্লাসের ভাঙা অংশের দিক দিয়ে পান না করা; ৬. জগ ইত্যাদি বড় পাত্রে মুখ লাগিয়ে পান না করা। কেননা এতে বেশি পানি চলে আসার বা সাপ-বিচ্ছু থাকার আশঙ্কা থাকে; ৭. পানি পান করার পর অন্যজনকে দিতে হলে প্রথমে ডান পাশের জনকে দেবেন। সেও তার ডান পাশের জনকে দেবেন, এভাবেই চলবে। চা ও অন্যান্য পানীয়ের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম; ৮. অজু করার পর যে পাত্রে হাত দিয়ে পানি নেওয়া হয়, সে পাত্রের অবশিষ্ট পানি কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ হয়; ৯. পানীয় দ্রব্য পান করে কাউকে দিতে হলে ডান দিকের ব্যক্তিকে আগে দেওয়া এবং এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই শেষ করা। (বুখারি: ৫৬১৬; ফাতাওয়া শামি: ১/১২৯)।
আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
মন্তব্য করুন