কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০২:২৫ এএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যে চিঠি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ

দুলাল আচার্য
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আওয়ামী লীগসহ গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন ৩৩১ দিন কারাভোগের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে সেদিন প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়। আর তার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রই মুক্তি পায়।

গ্রেপ্তার পূর্বমুহূর্তে শেখ হাসিনা একটি চিঠির মাধ্যমে দেশবাসীকে গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সেই চিঠিটি মিডিয়াসহ মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিশেষ দায়িত্বটা পালনের সুযোগ হয় আমার। ১৭ জুলাই ২০০৭ চিঠিটি দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রেক্ষাপট পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

১৬ জুলাই ২০০৭ সালের এই দিনে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পূর্বমুহূর্তে জাতির উদ্দেশে তিনি একটি চিঠি লিখে যান; যা পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। শেখ রেহানা সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করার সুবাদে এবং সাংবাদিক বেবী মওদুদের স্নেহধন্য হওয়ায় সেই স্মৃতিময় ঘটনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার সৌভাগ্য আমার হয়।

সেদিন ভোর ৬টায় রঞ্জনদার [বর্তমানে কলকাতা মিশনের প্রথম সচিব (তথ্য)] ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। তিনি জানালেন, দুলাল, আপাকে (শেখ হাসিনা) গ্রেপ্তার করেছে; টিভি খুলে দেখ। টিভিতে চোখ রাখতেই গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি দেখে বিস্মিত হই।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছি (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দুই বাড়ি আগে)। দেখি বেবী আপা টিভি রুমে। সিএসবি চ্যানেলটি সরাসরি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার, আদালতে নেওয়াসহ নানা দৃশ্য সম্প্রচার করছে। আমি পাশের একটি চেয়ারে বসি। আদালত এলাকায় গাড়ি থেকে নামানোর সময় টানাহেঁচড়ার দৃশ্য টিভিতে দেখে বেবী আপা হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। একটা শোকাবহ পরিবেশ। ঘণ্টাখানেক পর বেবী আপার মোবাইলে একটি ফোন এলো। তিনি কিছু না বলেই বের হয়ে গেলেন।

দুপুর ২টার পরপরই বিচিত্রা অফিস ফাঁকা হয়ে যায়। চারদিকে এক ধরনের নীরবতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি। রাস্তায় লোকজন খুব কম। অফিসে ওয়ালিদ, মনির ও আমি। ওয়ালিদ (বিচিত্রার সার্কুলেশন ম্যানেজার) বলল—চল, সবাই চলে গেছে আমরাও যাই। আপা (বেবী আপা) মনে হয় আজ আর আসবেন না। আমি বললাম, দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করি। বিচিত্রার চাকরি জীবনের প্রায় ৯ বছরে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেবী আপা অফিস থেকে যখনই বের হন না কেন, প্রায় দিনই অফিস বন্ধ হওয়ার আগে একবার আসেন। না এলে আগেই জানিয়ে দেন। বরাবরের মতো আমি আর মনির (অফিস সহকারী) অপেক্ষা করি।

বিকেল ৩টার কিছু বেশি হবে। বেবী আপা তার রুমে ঢুকেই মনিরকে ডাকলেন। ৪-৫ মিনিট পর আমি ইচ্ছা করেই আপার রুমে যাই। দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, আপা বইয়ের সেলফ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই বের করছেন, কিছু বই এরই মধ্যে টেবিলেও রেখেছেন। আমাকে দেখে বললেন, দুলাল, মনির আসুক, তোমাকে প্রেস ক্লাব যেতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, কিছু বললাম না। বুঝলাম আপার মনের অবস্থা ভালো নয়। আপা বললেন, তুমি এখন যাও, আমি ডাকব। ৫ মিনিট পর মনির এসে বলল, দুলাল ভাই ফুপু ডাকছেন (মনির বেবী আপাকে ফুপু বলে সম্বোধন করত)। আমি আপার রুমের দিকে এগোচ্ছি, পেছনে মনির। মনির বলল, দুলাল ভাই ‘জরুরি’ খবর আছে।

আমি রুমে ঢুকতেই বেবী আপা বললেন, এখানে ২০ কপি আছে। তুমি প্রেস ক্লাব গিয়ে আজাদের (বর্তমানে বাসসের এমডি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সেক্রেটারি) কাছে দেবে। আজাদকে তোমার কথা বলা আছে। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে যাও। আমি বুঝতে পারলাম, এটা বড় আপার হাতের লেখা। কারণ, পাশেই মূল কপিটা রাখা ছিল। আমরা বিচিত্রায় যারা চাকরি করতাম তারা সবাই শেখ হাসিনাকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) বড় আপা এবং রেহানা আপাকে ছোট আপা বলেই ডাকতাম। বিচিত্রায় চাকরি করার সুযোগে শেখ হাসিনার হাতের লেখার সঙ্গে আমার একটা পরিচয় রয়েছে। তার অনেক লেখা বিচিত্রায় কম্পোজ হতো এবং একপর্যায়ে সংশোধনের জন্য আমার কাছে আসত। ওয়ালিদকে বললাম ওঠো। টেবিল ছেড়ে উঠতেই বেবী আপা ডাকলেন, দুলাল। আমি কাছে যেতেই ১০০ টাকার একটি নোট দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি যাও, দেরি করো না। সাবধানে যেও। আর শোনো, আজাদকে বলবা যারা আওয়ামী লীগ বিট করেন তাদের ফোনে ডেকে হাতে হাতে দিতে। ঠিক আছে আপা, বলেই আমি বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমেই ওয়ালিদ বলল, আমি তোমার সঙ্গে নেই। আমি বুঝলাম এটি তার দুষ্টুমি। বেবী আপা আমাকে এর আগে যত দায়িত্বই দিয়েছেন, ওয়ালিদ কোনো না কোনোভাবে আমাকে সহায়তা করেছে।

আমরা মিরপুর থেকে আসা (৯ নম্বর) একটি লোকাল বাসে প্রথমে নিউমার্কেট যাই। নিউমার্কেটে গিয়ে বাস আর যাবে না। পরে নিউমার্কেট থেকে রিকশায় প্রেস ক্লাব যাই। ওয়ালিদ প্রেস ক্লাবে না নেমে পল্টনে প্রেসে চলে যায়। প্রেস ক্লাব গেট থেকে আমি আজাদ ভাইকে ফোন দিই। আজাদ ভাই আমাকে দেখে বললেন, কই দাও। প্যাকেটটি হাতে দিতেই তিনি কী যেন বলতে চাইলেন। আমি বললাম, আজাদ ভাই, বেবী আপা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিট যারা করেন তাদের ডেকে হাতে হাতে দিতে। আজাদ ভাই পুরো চিঠিটা পড়লেন। আমি বললাম, আজাদ ভাই, আমি কি আপনাকে কোনোভাবে সহায়তা করতে পারি। তিনি বললেন, তুমি কোন দিকে যাবে। আমি বললাম, মতিঝিলের দিকে। তিনি আমাকে ছয়টি কপি দিয়ে বললেন, যাওয়ার পথে এগুলো সংবাদ, যুগান্তর, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, অবজারভার অফিসে দিয়ে যাবে। একটা বেশি আছে, প্রয়োজনে ফটোকপি করে নিও।

প্রেস ক্লাব থেকে বের হয়ে প্রথমে রঞ্জনদাকে ফোন দিলাম। রঞ্জন সেন (বিচিত্রার সাবেক কর্মী) তখন সংবাদের রিপোর্টার। রঞ্জনদা বললেন, আমি অফিসে। সংবাদে ঢুকেই রঞ্জনদাকে একটি কপি দিলাম। তিনি দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে বার্তা সম্পাদক হয়ে নির্বাহী সম্পাদকের রুমে গেলেন (সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল তখন নির্বাহী সম্পাদক)। খুব দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলাম। প্রথমে অবজারভার হয়ে যুগান্তর অফিসের উদ্দেশে। অবজারভার অফিসে রিসিপশনে দিয়ে বের হলাম যুগান্তরের উদ্দেশে। সেখানে নিচে দাঁড়িয়ে ফজলুর রহমানকে (তিনিও বিচিত্রার সাবেক কর্মী, বর্তমানে ডিবিসির বার্তাপ্রধান) ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ওপরে আসো। হাতে একটি কপি দিলে তিনি দ্রুত সাইফুল ভাইকে (বর্তমানে যুগান্তরের সম্পাদক) দিলেন। সাইফুল ভাই এক নিঃশ্বাসে পড়ে আমার দিকে দুবার তাকালেন। বললেন, যাও সাবধানে যেও। ফজলু ভাই আমার সঙ্গে নিচে নামলেন এবং আমাকে বললেন, এখন কোথায় যাবে। আমি বললাম ইত্তেফাক, ইনকিলাব। ফজলু ভাই বললেন সাবধান! ব্যারিস্টার মইনুলের পত্রিকা কিন্তু...।

ইত্তেফাকের ওপরে উঠে প্রথম ফরাজী আজমল ভাইকে খুঁজলাম। তিনি অফিসে নেই। জাহিদুর রহমান সজলকে খুঁজলাম, সেও বাইরে। পরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ অফিসে থাকলেও তাদের কাছে দেওয়ার সাহস করলাম না। নিচে নেমে দুটো খাম কিনে ভেতরে একটি করে কপি ইত্তেফাক ও ইনকিলাব পত্রিকার প্রেস রিলিজ বক্সে রাখি। পরে আজাদ ভাইকে ফোন দিই। তাকে বিস্তারিত বললাম এবং আমার কাছে একটি কপি আছে বললাম। তিনি বললেন, ঠিক আছে, তুমি কাছাকাছি থেকো। প্রয়োজনে ফোন দেব। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যেতে ইচ্ছা হলো না। হাঁটতে হাঁটতে মতিঝিল মসজিদ মার্কেটে অর্থকণ্ঠ অফিসে গেলাম। পত্রিকাটির প্রকাশক আমার বন্ধু এনামুল হক এনাম। সেখান থেকেই বেবী আপাকে দুবার ফোন দিলাম। প্রথমবার তিনি ধরলেন না। দশ মিনিট পর আবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেই বললেন, দুলাল বলো। আপাকে বিস্তারিত বললাম, তিনি বললেন, ঠিক আছে বাসায় চলে যাও।

এবার এনামের রুমে গিয়ে তার হাতে শেষ কপিটি দিই। সে পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচটি ফটোকপি করিয়ে আনে। কিছুক্ষণের মধ্যে অর্থকণ্ঠ অফিসের সবাই জেনে যায়।

ঘড়ির কাঁটা ৯টা ছুঁইছুঁই। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই বাসায় চলছি। ভাবছি ১৯৭১ সাল আর ২০০৭ সাল। ব্যবধান ৩৬ বছরের। স্বাধীনতার সমবয়সী আমি। আমার যখন জন্ম হয় তখন এ দেশে চলছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতা। মা-বাবার কাছে শুনেছি, সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা। মার কোলে করে শরণার্থী হয়েছিলাম আমি।

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ওয়্যারলেস মেসেজের কথা আজ ইতিহাসের অংশ। পেশার কারণে অসংখ্যবার পড়েছি। লেখায় ব্যবহার করছি। সেই বঙ্গবন্ধুর মেসেজটিতে জাতির জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, দেশবাসী সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমরা মুক্ত হলাম, দেশ স্বাধীন হলো। সেদিনও আমার মনে হয়েছিল, ৩৬ বছর পর অন্যায় শাসন আর অরাজকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা জেলে। তার এ মেসেজটি (চিঠি) এ দেশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে লেখা। যে চিঠি আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ। আমি বঙ্গবন্ধুর মেসেজ আর আজ তার কন্যার মেসেজটি তুলনা করলাম। দুটোতেই মুক্তির কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে। দুটোই মুক্তির সনদ। একটি দেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশ স্বাধীন করতে, অন্যটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়, অগণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে। যে সংগ্রাম শেখ হাসিনা করে চলছেন দীর্ঘদিন ধরে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির

অসুস্থ নারীকে তালাবদ্ধ করে রাখেন বিআরডিবি কর্মকর্তা

এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়ায় পিতৃহীন সুরাইয়াকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা

গায়ানায় রাজ সাকিবের, শ্রীলঙ্কায় ভঙ্গুর বাংলাদেশ

শুল্ক আলোচনায় অগ্রগতি / মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

জবির ভূমিদাতা কিশোরী লালের শততম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শিক্ষকের ওপর হামলা, জবি ছাত্রদল নেতা মাহমুদুলের পদ স্থগিত

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাত গ্রেপ্তার

পদ্মা সেতু নির্মাণে মোবাইলে সারচার্জ বন্ধে হাইকোর্টে রিট

মাংসপেশিতে চোট জাকেরের

১০

জবিতে ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ৩ দাবিতে বিক্ষোভ

১১

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ / দেশে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা আড়াই হাজার

১২

বগুড়ায় আ.লীগ নেতার কারাদণ্ড

১৩

ফিরেই ঝলক, সাকিবের ব্যাটে দুর্দান্ত ফিফটি

১৪

রংপুর ইপিজেড বাস্তবায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ

১৫

গায়েবি মামলার আতঙ্কে ২০ গ্রামের মানুষ

১৬

পিআর পদ্ধতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান উদ্বেগজনক : মামুনুল হক

১৭

সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিলল ফায়ার সার্ভিসের গাভি

১৮

চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আ স ম রব

১৯

মহড়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় পুলিশের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত

২০
X