কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

শোক ও শ্রদ্ধা

শোক ও শ্রদ্ধা

প্রেম ও দ্রোহের কবি এবং সাংবাদিক হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেল থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যু বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কবি হেলাল হাফিজ ছিলেন তারুণ্যের শক্তি এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সাহসী কণ্ঠ। তার কালজয়ী কবিতার মতোই তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে। প্রধান উপদেষ্টা কবির পরকালীন জীবনের শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে সারা দেশের মানুষের মতো কালবেলা পরিবারও শোকাহত। আমরা কবির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুন কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ দিয়েই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন হেলাল হাফিজ। এ কাব্যগ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার শেষে উল্লিখিত তারিখ অনুযায়ী কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থটির এখন পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি সংস্করণ হয়েছে। এর বাইরেও যে কত সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে, তার কোনো হিসাবে নেই। এর আগে বাংলাদেশের কোনো কবিতার বইয়ের বেলায় ঘটেনি। এই কবিতার বইয়ের পাঠকের সংখ্যা যে অগণিত, তা বলাই বাহুল্য। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থই হেলাল হাফিজকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো বই বের করেননি তিনি। ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ১৯৬৫ সালে হেলাল হাফিজ নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতা শুরু করেন।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক। দৈনিক ‘দেশ’ প্রকাশের পর তিনি পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে হেলাল হাফিজ পাঠক মনে যে নাড়া দিয়েছেন, তা এখনো ইতিহাস হয়ে আছে। তিনি লিখেছেন খুব কম। এত কম কবিতা লিখে এত খ্যাতি পাওয়ার নজির বাংলাদেশের সাহিত্যে নেই। তার প্রতিটি কবিতা এদেশের কবিতাপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই তিনি এদেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুদানে কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ৪৬ শিশুসহ নিহত ১১৪

আমনের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ট্রাকের ধাক্কায় তরুণের হাত বিচ্ছিন্ন

জুলাই হত্যা মামলায় সালমান-আনিসুল ট্রাইব্যুনালে

একনজরে দেখে নিন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচসূচি

জুলাই একটি আদর্শিক ভিত্তির ওপর রচিত হয়েছে : জাহিদুল ইসলাম

বুসকেটস ও আলবার বিদায়ী ম্যাচে এমএলএসের রাজা মেসি

৭ ডিসেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

বিশ্বকাপ ফুটবলের পূর্ণাঙ্গ সূচি ঘোষণা, দেখে নিন কবে কার ম্যাচ

জুলাইয়ের ১১৪ শহীদের মরদেহ উত্তোলন শুরু আজ

১০

জামায়াত নেতাকে কোপাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী

১১

টিভিতে আজকের যত খেলা

১২

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

১৩

আলাস্কায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প, কাঁপল কানাডাও

১৪

শীতের দাপটে কাঁপছে তেঁতুলিয়া

১৫

মধ্যপ্রাচ্য নীতি পাল্টে দিলেন ট্রাম্প

১৬

ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, যেভাবে গ্রেপ্তার হলো খুনি

১৭

৫৬০০ নতুন সেনা মোতায়েন করল ভেনেজুয়েলা

১৮

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৯

গোয়ায় নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২৩ জনের মৃত্যু

২০
X