এম এ আজিজ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:১২ এএম
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনী সংকট ঘনীভূত হচ্ছে

নির্বাচনী সংকট ঘনীভূত হচ্ছে

বিএনপির সরকার পতনের কর্মসূচি ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরই বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে ২৮ অক্টোবরের আগে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে মানে মানে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির এটি পতন-যাত্রা।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২২ অক্টোবর সংসদীয় দলের সভায় বলেন, ‘প্রতি ছয় মাস অন্তর করা জরিপের ভিত্তিতে আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই করছি।’ অর্থাৎ বর্তমান সরকারের অধীনেই দৃঢ়ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি দল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় ৭-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অর্থবহ সংলাপের ওপর তাগিদ দিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকার মনে করে, বিএনপি মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষক ও সন্ত্রাসী দল। তাদের সঙ্গে আবার সংলাপ কীসের। সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলছে, কোনো দল নির্বাচনে না এলেও যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার দেখতে চায়।

অন্যদিকে, বিএনপি বর্তমান সরকারকে ‘নিশিরাতের ভোটের অবৈধ সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তার পদত্যাগের জন্য একদফার আন্দোলন করছে, আলটিমেটাম দিচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য। তারা বলছে, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাহলে সংলাপটা কার সঙ্গে কে করবে?

সরকারি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য গিয়ে হেরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। আবার বিরোধী দল লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হারতে রাজি না। এরই মধ্যে বিএনপি সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সরকারি দল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা কৌশল নিয়ে মাঠে থাকবে।

১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি হামলা-মামলা ও নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াইয়ের বিকল্প দেখছে না। তারা মনে করে, সরকারি দল যদি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারে, তাহলে বিএনপিকে চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে এবং আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকা নেতাকর্মীদের শেষ ঠিকানা হবে জেলখানা। সরকার সব রাজনৈতিক দলের জন্য ‘লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির আগ্রহ দেখাছে না। বরং সরকারের আচরণ ও পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, তারা ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনের মতো একটি নির্বাচন আয়োজনের দিকেই হাঁটছে, যা ঘটলে দেশের জন্য মহা-বিপৎসংকেত ডেকে আনতে পারে।

অন্যদিকে, ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে। বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনের চাপ যেমন রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। এ চাপের মুখে নমনীয় হলেই আওয়ামী লীগকে পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তাই সরকারি দল কোনো চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে চাইছে না।

২২ অক্টোবর দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’-এর এক প্রতিবেদন বলেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত বা কারচুপির কোনো ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে চীন ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে পারে বাংলাদেশ সরকারের।

দৈনিক সমকাল ২২ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বলছে, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী দলের চূড়ান্ত আন্দোলন ঘিরে প্রবল বেগে চলছে বিএনপি নেতাদের মামলার বিচারকাজ। মামলার কার্যক্রমে এমনই গতি—দিনে তো বটেই, রাতেও চলছে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রিয় রাজনীতির মাঠকে আপাতত বিদায় বলে সাজা মাথায় নিয়ে তাদের কারও কারও গন্তব্য চৌদ্দ শিকে।’ সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার, নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হলে সংঘাত-সংঘর্ষ-প্রাণহানি অনিবার্য। যাই ঘটুক, তবুও বড় দুই দলই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে আত্মঘাতী লড়াই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যাবে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো অর্থবহ সংলাপ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে দেশটি আরও নানা ধরনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। একটি ভয়ংকর বিপর্যয়ের দিকে দেশকে ঠেলে না দিয়ে, দেশের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসন করতে পারে। নিশ্চয়ই দলগুলো সমঝোতার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে দেশের ভেতরে সম্ভাব্য সংঘাত ও সহিংসতা এবং বহির্বিশ্বের সব ধরনের হস্তক্ষেপ বা কঠোর ব্যবস্থা এড়াতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা’ আছে, যা মার্কিন জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দ্বিতীয়ত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে ভূরাজনীতি। প্রধানত এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি জনসমর্থিত গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা কার্যকর রাখতে চায়। যাতে বাংলাদেশ চীনের বলয়ে ঢুকে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা স্থায়ী করতে না পারে বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে না পড়ে। বাংলাদেশের নির্বাচন উপলক্ষ করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যেও ভূরাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিত্রশক্তিরা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন বলয় এটাকে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে প্রকারান্তরে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনকে সমর্থন করছে।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

‘স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ মানুষের ভালো থাকার জন্য হতে হবে’

ভারতে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ

লুকিয়ে রাখা ২৯ কেজি ওজনের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩ 

হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে ৩ দাবি

যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে মাঠে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে ‘সোনারগাঁ’ : মামুনুল হক

‘এ দেশে আ.লীগের নেতাকর্মীদের ভাত নেই’ 

ফিল্ম আর্কাইভে জাতীয় চলচ্চিত্র সংসদের সম্মেলন

১০

‘শাহবাগে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে জুলাই গণহত্যার ডকুমেন্টারি’

১১

নাসিরনগরে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষক নিহত 

১২

‘সবাইকে কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে একযোগে কাজ করতে হবে’

১৩

ভারতের ৩৬ জায়গায় পাকিস্তানের ৪০০ হামলা

১৪

কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

১৫

অভিযোগও ভারতের, রায়ও ভারতের, হামলাও ভারতের : পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র

১৬

আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

১৭

ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায় : সারজিস

১৮

‘এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, জণগণের’

১৯

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল আরও এক মুসলিম দেশ

২০
X