তীব্র গরমে যখন জনজীবনে নাভিশ্বাস তখন অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ। জ্বালানি সংকটে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো অঞ্চলে দৈনিক চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আবার কোথাও বা আট থেকে দশ ঘণ্টাও থাকছে না বিদ্যুৎ। ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া, ব্যবসা, চিকিৎসাসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় একটু স্বস্তির খোঁজে মধ্যরাতেও অনেকে বেরিয়েছেন ঘরের বাইরে। কেউ সারিবদ্ধভাবে ফুটপাতে বসে একটু বাতাসের অপেক্ষায় আবার কেউ হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন ছোট্ট শিশুকে। কেউ আবার খালি গায়ে, গামছা গলায় বিদ্যুতের অপেক্ষা করছেন। শিল্প-কলকারখানা, দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরম, পানিশূন্যতা, উৎপাদন বন্ধ হয়ে আর্থিক ক্ষতি, অসুস্থতার হার বৃদ্ধিসহ ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী। প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান বিপু জানিয়েছেন, কয়েকটি পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে। কিছুদিন এ পরিস্থিতি চলবে। কয়লার অভাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে । এতে সিস্টেমে একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কিছুটা জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের ওপরে লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দু-এক মাস সময় লাগবে।
অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহ সহসাই কমছে না। দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা কমতে পারে। সেখানে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য জায়গায় আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন একটি পরিস্থিতিতে সামর্থ্যবান মানুষ ঝুঁকছে চার্জার ফ্যান ও লাইটের দিকে। আর এই সুযোগে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও লাইটের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎই এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। ফলে ভোক্তাদের কাছে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার তদারকির জন্য সরকারের কয়েকটি সংস্থা আছে। তবে পণ্যের মজুত রাখা, অতিমুনাফার চিন্তা থেকে ব্যবসায়ীদের বিরত রাখা, তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনা—এসব যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই সুযোগ নিচ্ছে। অভিযান আর জরিমানা করলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য দরকার সুস্পষ্ট পদক্ষেপ ও ইতিবাচক বার্তা।
আমারা মনে করি, এভাবে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা অপরাধ বটে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের।
ব্যবসায়ীরা কায়েমি স্বার্থে ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে, আর সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, এটা চলতে পারে না। আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। এটি সরকারের দায়িত্বও বটে।
মন্তব্য করুন