জাকির হোসেন
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভাষার জন্য আসামে প্রাণ দিয়েছেন যারা

ভাষার জন্য আসামে প্রাণ দিয়েছেন যারা

বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান, অহিউল্লাহসহ অনেকে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বব্যাপী তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। কিন্তু আসামে বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারীরা আমাদের অনেকেরই স্মৃতির দেয়াল থেকে হারিয়ে গেছেন। ১৯৬১ সালে ভারতের আসাম প্রাদেশিক সরকার বরাক উপত্যকার (বরাক ভ্যালি) কাছাড় জেলার বাঙালি অধ্যুষিত শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির বাংলা ভাষাভাষীদের প্রাণের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধু অহমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা করে। এই ঘোষণার প্রতিবাদে বাঙালিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং পরে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিসহ বরাক উপত্যকার একাধিক এলাকায় এই দাবিতে একের পর এক আন্দোলন সংঘটিত হতে শুরু করে। সেই আন্দোলনের ঢেউকে প্রতিহত করতে পাল্টা চাপ দিতে শুরু করে তৎকালীন রাজ্য সরকার। ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শিলচরে গঠিত হয় ‘কাছাড় গণসংগ্রাম পরিষদ’। নীলকান্ত দাস, রথীন্দ্রনাথ সেন, বিভূতিভূষণ চৌধুরীর নেতৃত্বে শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে শুরু হয় বাংলা ভাষার সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে গণআন্দোলন। ওই বছরের ১৪ এপ্রিল পালিত হয় ‘সঙ্কল্প দিবস’। ২৪ এপ্রিল থেকে এই দাবিতে বরাক উপত্যকার সর্বত্র শুরু হয় ১৫ দিনব্যাপী পদযাত্রা। এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন, ১৮ মের মধ্যে বাংলাকে আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া না হলে ১৯ মে বরাক উপত্যকায় সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের হুমকি, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিছুতেই কাজ হয়নি। ১৮ মে পর্যন্ত বাংলাকে আসামের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি না দেওয়ায় ১৯ মে সকাল থেকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী হরতাল শুরু হয়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভের আগুন। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি পুলিশের নাগালের বাইরে চলে গেলে প্রথমে লাঠিচার্জ করে আধাসামরিক বাহিনী। তারপর শুরু হয় গুলি। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন ১৫ বিক্ষোভকারী। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন। পরদিন আরও দুজন মারা যান হাসপাতালে। সেই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, হীতেশ বিশ্বাস, কুমুদরঞ্জন দাস, তারিণী দেবনাথ, সুনীল সরকার ও সুকোমল পুরকায়স্থ। তাদের সেই আন্দোলন ও আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। পরবর্তী সময়ে বাংলাকে আসামের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাষাশহীদদের স্মরণে আসামে এখনও ১৯ মে ভাষা দিবস পালিত হয়।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, শয্যা সংকটে মেঝেতে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা

আমিরাতে আটক বাকি ২৫ বাংলাদেশি কবে ফিরছেন, জানাল সরকার

আগামী ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’

এক হওয়া ৫ ব্যাংকের কর্মীদের চাকরি নিয়ে প্রেস সচিবের যে বার্তা

যে কারণে গভীর রাতে স্বামীর কবর জিয়ারত করতে যান খালেদা জিয়া

তারেক রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বটগাছ যমুনায় বিলীন

সকালে খালি পেটে ভুলেও খাবেন না যে ৭ খাবার

আগামীর বাংলাদেশে চাঁদাবাজি মাদক সন্ত্রাস থাকবে না : নজরুল ইসলাম আজাদ

গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ১০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি

সামিতকে বেঞ্চে রেখেই ক্যাবরেরার একাদশ

১০

যে ৮ ধরনের মানুষের জন্য কফি খাওয়া বিপদজনক

১১

নির্বাচন নিয়ে কনফিউশনে দুই তথাকথিত সিনিয়র সাংবাদিক : প্রেস সচিব

১২

বজ্রপাত প্রতিরোধে ২০০ তালের চারা রোপণ করল পুলিশ 

১৩

জামায়াত আমিরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৪

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে গেলেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা

১৫

আরব আমিরাতে ২৫ বন্দির মুক্তির বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

১৬

হত্যার পর মা-বাবাকে ঘরের ভেতরে পুঁতে রাখেন ছেলে

১৭

শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ

১৮

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

১৯

পরকীয়া সন্দেহে গলা কেটে স্ত্রীকে হত্যা

২০
X