বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কাজী বনফুল
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৪ এএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মাইন্ডফুল বনাম ইমোশনাল ইটিং

মাইন্ডফুল বনাম ইমোশনাল ইটিং
মাইন্ডফুল বনাম ইমোশনাল ইটিং

বর্তমান সময়ে আমাদের অঞ্চলে সবচেয়ে যে বিষয় নিয়ে মানুষের ভেতর ক্ষোভ, হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের অঞ্চলে কিছু অসাধু মানে যে ব্যক্তি তার ভেতরকার সাধুতা পরিত্যাগ করেছে, এমন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্যের বাজারকে তাদের হাতের পাশার ঘুঁটিতে পরিণত করেছে। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ চাইলেই আর তার পছন্দের খাদ্যদ্রব্য যথাসম্ভব ক্রয় করতে পারছে না কারণ দ্রব্যের ক্রয়ের সঙ্গে ব্যক্তির উপার্জনও জড়িত। আমাদের খাবার গ্রহণ ও খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনতাই আমাদের এ চাপ থেকে মুক্ত করতে পারে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্যও হতে পারে এক বিস্ময়কর উপায়।

একটি দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস সেই দেশের অর্থনীতি ও সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যাভ্যাস অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত। খাবারের বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষ উদাসীন যার ফলে একটা সময় চিকিৎসক তাদের পছন্দের ওই সব খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিলে তারা মোটামুটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে কিন্তু এ সচেতনতাটা যদি তারা আগে থেকেই হতো তাহলে শারীরিকভাবে আরও বেশি সুস্থ থাকত এবং মানসিকভাবেও থাকত উৎফুল্ল। খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে আমাদের শরীর ও মন দুটোই এক অদৃশ্য সার্কেল আবদ্ধ, যার ফলে খাদ্য যদি সুষম ও স্বাস্থ্যকর না হয় তাহলে শরীর ও মনও সে ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় না।

আমাদের অঞ্চলে আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছেছি, এ অবস্থায় আমাদের অবশ্যই ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ নামক যে খাদ্য পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সচেতন দেশগুলো এবং দেশের মানুষ গ্রহণ করেছে; এ গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত, যা একদিকে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে করবে লাভবান, অন্যদিকে শারীরিকভাবে যার গুরুত্ব অবর্ণনীয়।

মাইন্ডফুল ইটিংয়ের আগে আমাদের জানতে হবে আমরা আসলে কোন খাদ্য পদ্ধতিতে আছি। আমরা মূলত ‘ইমোশনাল ইটিং’ নামক পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। তাহলে ইমোশনাল ইটিংটা আসলে কী? ইমোশনাল ইটিংয়ের কিছু বিশেষ চরিত্র রয়েছে, যা দেখে সমস্যাটি শনাক্ত করা যায়।

খিদে না পেলেও খাবার খাওয়ার প্রবণতা, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে, ঘন ঘন খাবার খাওয়ার ইচ্ছে, দ্রুত খাবার খাওয়া, খাবার খাওয়ার সময় অন্য কাজ বা চিন্তা করতে থাকা, শরীর খারাপ হতে পারে জেনেও খাওয়া, খাবারটা খেয়ে মন ভালো লাগছে এমনটা মনে হওয়া, আদৌ মনের সেই ভালো লাগা স্থায়ী না হওয়া!

ইমোশনাল ইটিংয়ের ফলে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে, বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে থাকে, এমনকি মানসিক সমস্যাও হতে পারে, দেখা দিতে পারে দুশ্চিন্তা ও অবসাদের মতো সমস্যা—তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এ ইমোশনাল ইটিংকে নিজের অজান্তে ফলো করছে।

এ ইমোশনাল ইটিংয়ের বিপরীতে বিশ্বের সচেতন দেশ ও মানুষ গ্রহণ করেছে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’, এই মাইন্ডফুল ইটিং হচ্ছে ইমোশনাল ইটিংয়ের বিপরীত খাদ্য ধারণা, যা মানুষ দেহ এবং মনের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে উপযুক্ত ব্যবস্থা।

মাইন্ডফুল ইটিং আসলে কী?

ইমোশনাল ইটিংয়ের ঠিক উল্টোটা হলো মন দিয়ে খাওয়া বা মাইন্ডফুল ইটিং। ইমোশনাল ইটিংয়ে অনেকেই মনে করেন, পেট ঠিকমতো ভরেনি বলে আবার খাচ্ছেন। কিন্তু আসল বিষয়টি হলো মন দিয়ে খাওয়া হয়নি। খাবার খাওয়ার সময় মন রাখতে হবে খাবারেই। পাতে থাকা খাবারের স্বাদ অনুভব করতে হবে প্রতি গ্রাসে। অন্য কাজ করা যাবে না। ভাবা যাবে না অন্য কিছু। ইটিং মাইন্ডফুল হলে ইমোশনাল ইটিংয়ের সমস্যা অনেকটাই কমে। তাই চিকিৎসকরা এ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।‌

খাদ্য শুধু দেহের তৃপ্তির জন্য নয়, খাদ্য মনেরও তৃপ্তির বড় কারণ। সে ক্ষেত্রে মাইন্ডফুল ইটিং একটি উচ্চধারণা। আমরা নিজের অজান্তেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গল্পে গল্পে বা পেট ভরানোর জন্য বেশি পরিমাণ খাবার খেয়ে ফেলি, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, পরিমাণে কম খাবার খেয়েও কিন্তু মনের দিক থেকে ভালো থাকা যায়। যদি খাবারের সঙ্গে সেই সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়।

পুষ্টিবিদদের মতে, এ অভ্যাস শুরু করতে হবে বাজারের তালিকা করার সময় থেকেই। কোন খাবারের কেমন পুষ্টিগুণ তা জেনে, তবেই কিনবেন। এ ছাড়া সারা দিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি যখন যে খাবারই খান তার স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ—সব ইন্দ্রিয় দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। সব খাবার সময় নিয়ে চিবিয়ে, মনোনিবেশ করে খাওয়া অভ্যাস করতে হবে।

অনেক বেশি পরিমাণ খাওয়ার চেয়ে অল্প পরিমাণ মন দিয়ে ও পুষ্টিমান যাচাই করে খেলে ওই বেশি পরিমাণের চেয়ে শরীর ও মন যেমন বেশি পুষ্টি পায়, তেমনি কাজ করার জন্য যথেষ্ট শক্তির জোগানও পাওয়া যায়।

জাপানি এক খাদ্য বিশেষজ্ঞ একবার বলেছিলেন, ‘খাদ্য হচ্ছে এমন এক জিনিস, যা মানুষ বুঝতেই পারে না যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাবারই মানুষকে খেয়ে ফেলে এবং খাবার নিজে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেই খাবার নামক দৈত্য থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে মানসিক নিয়ন্ত্রণ।’

যুক্তরাষ্ট্রের আরেক দল গবেষক বলেছেন, ‘শরীরে প্রাণ ধারণের জন্য খাবার অপরিহার্য কিন্তু সেই খাবার যদি শরীরের প্রয়োজনের মাত্রাকে অতিক্রম করে এবং শরীরের প্রয়োজনের বাইরে অযাচিতভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে সেই খাবারই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে, যা মানুষ যখন বুঝতে পারে তখন আর তার খাবারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সময় অবশিষ্ট থাকে না।’

তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমরা যদি এখনই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে মাইন্ডফুল ইটিংকে ফলো করি তাহলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের উপকার নিশ্চিত হবে এবং সেইসঙ্গে আমরা অর্থনৈতিকভাবেও হব লাভবান। সেইসঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য নিয়ে বাণিজ্য করছে তারাও তাদের এ অপকর্ম চালিয়ে যেতে পারবে না। তাই আমাদের এখনই সময় খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে যথার্থ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার। তাহলেই আমরা হতে পারব একটি সুস্থ দেহ ও সুন্দর মনের অধিকারী।

লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে ‘কমোডিটি মার্কেট’ চালুর অনুমোদন

সীমান্তে মাছ ধরতে গিয়ে আটক সবাই

‘নির্বাচনী রোডম্যাপের জন্য যারা হতাশ, তারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজে হতাশ নয়’

‘শেখ হাসিনা দুপুরের খাবারও খেয়ে যেতে পারেনি’

কী সিদ্ধান্ত নিলেন, জাতিকে জানান : রাশেদ খাঁন

জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিল ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি দল

দেশের আকাশে চক্কর দিয়ে গেল ভারতের তিনটি ড্রোন

দ্রুত ডাকসুর ঘোষণা না আসলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিবিরের

অগ্রণী ব্যাংক ও ব্রাকনেটের মধ্যে প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

সচিবালয়ে প্রবেশে বাধা অনাকাঙ্ক্ষিত : ইউট্যাব

১০

সাবেক ভূমিমন্ত্রীকে বাসায় পাঠিয়ে দিল পুলিশ

১১

আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা চরমোনাই পীরের

১২

আর কোনো তালবাহানা নয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে : খোকন

১৩

পুরোনো ভুল থেকে শিখতে চান লিটন

১৪

নারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের ঘটনায় মহিলা পরিষদের উদ্বেগ 

১৫

সম্মেলন ছাড়াই লক্ষ্মীপুরে ছাত্রদলের ১০ কমিটি

১৬

আলোচনা সভায় বক্তারা / ১০ মাসেও সরকারের মনের কথা বোঝা যাচ্ছে না

১৭

রাজশাহীতে পরিত্যক্ত ‘রকেট লঞ্চার’ উদ্ধার

১৮

সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তারের পর সেনা সদরের বার্তা

১৯

বগুড়ায় মিডিয়া কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন শহীদ শিমুল একাদশ

২০
X