শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে একটা সময় ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। ঘরের মাঠেও যেন ভিনদেশি হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদরা। সম্প্রতি ওয়ানডে সংস্করণে এতটাই খারাপ খেলছিলেন তারা; মেনে না নিয়েও যেন উপায় ছিল না। কিন্তু রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে ফিরতেই স্লোগানও বদলে গেল। এই লেগ স্পিনারের ঘূর্ণিতে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ‘রিশাদ রিশাদ’ শব্দে ভরে ওঠে মিরপুরের গ্যালারি। প্রায় হাজার দশেক দর্শককে মাতিয়ে রেখেছিলেন রিশাদ। তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ছোট পুঁজিতেও বড় জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদের পর চেনা মিরপুরে ফিরেই জয়ের দেখা পেল মিরাজের নেতৃত্বাধীন দল। সেটাও পছন্দের উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোতেই মিলল সাফল্য।
প্রায় দুই বছর পর মিরপুরে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ। লম্বা সময় পর ৫০ ওভারের সংস্করণে ফেরাটাও বাংলাদেশের জয়ের মধ্য দিয়েই হলো। চেনা উইকেটে প্রতিপক্ষকে কাবু করেছেন মিরাজরা। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে ৭৪ রানে জিতল বাংলাদেশ। ২০৮ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়ায় উইন্ডিজ গুটিয়ে গেছে ১৩৩ রানে। ৯ ওভারে ৩৫ রান খরচে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রিশাদ। অধিনায়ক হিসেবে ১১ ওয়ানডেতে মিরাজের নেতৃত্বে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়ের দেখা।
মিরপুরের কালো মাটির উইকেট নিয়ে কম কথা হয়নি। প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে স্বাগতিক—সবার জন্য অনেকটা চমক দেওয়ার মতোই ছিল এই উইকেট। ধারাভাষ্যকার পারভেজ মারুফ তো বলেই ফেললেন এমন উইকেট প্রথম দেখলেন তিনি। পিচ রিপোর্টে লঙ্কান এই ধারাভাষ্যকার বলেন, ‘দুই বছর আগে এখানে সর্বশেষ ওয়ানডে হয়েছিল এবং আমরা এখন অনেকটা ভিন্ন উইকেট দেখতে পাচ্ছি। আমি এখানে অনেক ম্যাচ কাভার করেছি এবং এবারই প্রথম কোনো ঘাসের অস্বিত্ব দেখতেছি না।’
আউট অব সিলেবাস হয়ে গেল না ব্যাপারটা! মিরপুরে রিশাদের স্পিনই এত বড় পার্থক্য গড়ে দেবে, কে ভেবেছিল! ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা যখন একের পর এক বাংলাদেশি ব্যাটারদের ফেরাল—তখন তাসকিন, মুস্তাফিজে ভরসা করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু হলো উল্টো। পেসার নয়, লেগ স্পিনেই অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে উইন্ডিজের। মিরাজ আর তানভীর ইসলাম মিলে বাকিটাও ধসে দিয়েছেন। অথচ উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু পেয়েছিল উইন্ডিজ। ৫১ রান তোলেন ব্রেন্ডন কিং ও অলিক আথানেজে। ২৭ রান করা আথানেজে ফিরিয়ে শুরু রিশাদের। এরপর শুধু তার স্পিন বিষই দেখা মিলল মিরপুরে। একে একে কেসি কার্টি, শেরফান রাদারফোর্ড, বেন্ডন কিং, রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে ফাইফার স্পর্শ করেন তিনি। শেষ দিকে জেইডেন সিলসকেও নিজের শিকার বানান। উইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের আশা ভরসা সবই যেন রিশাদের স্পিনেই দিশেহারা হয়ে পড়ে। বাকি বোলারদের জন্য কাজটা সহজ করে দেন এই লেগ স্পিনার। ক্যারিয়ারে আগে কখনো এক ম্যাচে ৩ উইকেট নিতে না পারলেও এবার ঠিকই মিরপুরের স্পিন ট্র্যাকে নেন ৬টি।
অবশ্য এমন স্লো টার্ন উইকেটে ব্যাটিং করতে গিয়ে ভুগেছিল বাংলাদেশের ব্যাটাররাও। টপঅর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারে তাওহীদ হৃদয়ের ৫১ রানের ইনিংস ও অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৪৬ বাদ দিলে বলার মতো পারফরম্যান্স কেউই দেখাতে পারেননি। শেষ দিকে রিশাদের ছোট্ট ক্যামিওতে ২০৭ রানের পুঁজি মেলে—যা জেতার জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
মন্তব্য করুন