আজ রোববার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে হারানোর ১২ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জের জোকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তারা। ‘কাগজের ফুল’ সিনেমার শুটিং লোকেশন দেখে ঢাকায় ফেরার পথে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে থাকা আরও তিন চলচ্চিত্রকর্মী মারা যান। ওই তিনজন হলেন গাড়িচালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল। আহত হন তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম জলি।
তারেক মাসুদ ১৯৮২ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় ‘আদম সুরত’ নামের প্রামাণ্যচিত্র। এরপর বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৫ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ১৯৯৬ সালে ‘মুক্তির কথা’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়।
তারেক মাসুদ ২০০২ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ নির্মাণ করেন। এটি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবসহ কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। সিনেমাটির জন্য কানে ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট লাভ করেন এ নির্মাতা। ‘মাটির ময়না’ সিনেমাটির জন্য ২৭তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার লাভ করেন তারেক মাসুদ। এ ছাড়া অস্কারের বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র শাখায় নিবেদন করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এটি। এর আগে ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ নামে সিনেমা অস্কারে প্রদর্শিত হয়। তারেক মাসুদ আমৃত্যু সিনেমা দিয়ে মানুষের মধ্যে আলো ছড়িয়ে গেছেন। তার পরবর্তী সিনেমা ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) ‘রানওয়ে’ (২০১০) সালে মুক্তি পায়।
এদিকে, ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি পেয়েছিলেন মিশুক মুনীর। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। মিশুক মুনীরের আরেক পরিচয় তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে। তারেক মাসুদের সিনেমা ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন মিশুক। এ ছাড়া তিনি ‘রিটার্ন টু কান্দাহার’, ‘ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম’ প্রামাণ্যচিত্রগুলোতেও কাজ করেছেন। নিজ নিজ কর্মে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে (মরণোত্তর) একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।
মন্তব্য করুন