প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা নিঝুম দ্বীপের সমুদ্রসৈকত এখন দখলদারদের কবলে। বুলডোজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে বিচের মাটি কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। কেউ কেউ বালুর বাঁধ দিয়ে তৈরি করছেন নিজেদের সীমানা, আবার কিছু অংশে ছোট ছোট পুকুরও খনন করা হয়েছে।
সরকারি জমি দখলের এ মচ্ছব প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও রাজনৈতিক নেতারা একে অন্যকে দায়ী করছেন, প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
৫ আগস্টের পর থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপের সমুদ্রসৈকতের উত্তর পাশে দখলদারদের কার্যক্রম বেড়েছে, যা পর্যটন শিল্পের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটনের সৌন্দর্য ধ্বংসের মুখে: নোয়াখালীর বিখ্যাত নিঝুম দ্বীপ তার মায়াবী হরিণ ও বিশাল সমুদ্রসৈকতের জন্য পরিচিত। একটি চক্র প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সৈকতের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
বিশাল এই সৈকতের উত্তর পাশের অংশ দখল হয়ে গেছে, যেখানে লোকালয় থেকে নদী পর্যন্ত মাটি কেটে বড় গর্ত তৈরি করা হয়েছে। কেউ কেউ সেখানে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ফেলেছে।
এ কাজ রাতের আঁধারে নয়, দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই ঘটছে; কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দখলদাররা আরও উৎসাহিত হচ্ছে।
দখলকৃত এলাকায় ঘর নির্মাণ: নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দখল হওয়া জায়গায় ঘর নির্মাণ চলছে। স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব মোছলেহ উদ্দিন জানান, ‘কয়েকজন ব্যক্তি নামার বাজারের পাশের জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে, আমিও কিছু অংশ ঘিরে রেখেছি। বর্ষার পর সেখানে বাড়ি তৈরি করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুই মেয়ের জন্যও দুটি ভিটা ঠিক করেছি।’
এই বিচটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যেখানে প্রতিদিন বিকেলে পর্যটকরা ঘুরতে আসে, অনেকে তাঁবু করে রাত কাটায়। কিন্তু উত্তর পাশে দখল হয়ে যাওয়ায় পর্যটনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, অনেক পর্যটক এলাকাটি এড়িয়ে চলছেন।
পর্যটকদের ক্ষোভ ও হতাশা: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘নিঝুম দ্বীপের মূল আকর্ষণ এই সমুদ্রসৈকত। এটি দখল হয়ে গেলে পর্যটকরা কেন আসবে? সৈকতের উত্তর পাশে এখন যাওয়া যায় না, কারণ সেখানে মাটির বিশাল স্তূপ পড়ে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি জায়গা রক্ষার কোনো আইন নেই মনে হয়, কারণ এখানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য: নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একটি চক্র সমুদ্রসৈকতের জায়গা দখল করেছে এবং অনেকেই দলের নাম ব্যবহার করছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাভলী আক্তার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি; কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিন-চার মাস ধরে দখলদাররা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসনের কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি।’
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামীম বলেন, ‘নিঝুম দ্বীপের সৈকতের জায়গা দখলের বিষয়ে শুনেছি। খুব দ্রুতই সহকারী ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করিয়ে দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হবে এবং উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’ পর্যটনের সম্ভাবনাময় নিঝুম দ্বীপ রক্ষা করতে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় অবৈধ দখলদারদের কারণে দ্বীপের অনন্য সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন