পানি প্রকৃতির এক অনন্য দান, যা মানুষসহ প্রত্যেক
প্রাণীর জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অপরিহার্য। দৈনন্দিন
জীবনে আমরা নানা অভ্যাস গড়ে তুলি, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু অবহেলিত অভ্যাস হলো সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করা। রাতভর শরীর বিশ্রামে থাকলেও এর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম থেমে থাকে না। এ সময় শরীরে হালকা মাত্রার পানিশূন্যতা তৈরি হয়। ঘুম থেকে উঠে এক-দুই গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে সেই ঘাটতি পূরণ হয় এবং শরীরের পরিপাক ও পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সকালে পানি পানের উপকারিতা
সকালে পানি পান হজমক্রিয়া উন্নত করে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে এবং হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কমাতে
বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখে। শরীর থেকে টক্সিক বা ক্ষতিকর উপাদান নির্গত করতে সহায়তা করে। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে। মানসিক সতর্কতা ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
পানির পরিমাণ ও পানের সঠিক পদ্ধতি
সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা কুসুম গরম পানি
পান করাই শ্রেয়। একবারে বেশি না নিয়ে ধীরে ধীরে
চুমুক দিয়ে পান করা উত্তম। কেউ কেউ পানিতে এক
চামচ লেবুর রস যোগ করেন, যা লিভারকে সক্রিয়
করতে এবং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সকালে পানি খাওয়ার পরপরই নাশতা খাবেন না। কিছুক্ষণ বিরতি নিন। সকালে খালি পেটে পানি পান
নতুন রক্ত কোষ এবং পেশি কোষ জন্মানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
সতর্কতা
হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা কিংবা পানি সংশ্লিষ্ট সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য এ অভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি পান করলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
সঠিক পানির পরিমাণ নির্ধারণ করবেন কীভাবে
যদি প্রস্রাবের রং হালকা বা স্বচ্ছ হয়ে থাকে এবং তৃষ্ণা বা ক্লান্তি অনুভব না হয়, তবে ধরে নেওয়া যায় পানি যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়েছে। সকালের এ সহজ অভ্যাসটি দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনধারার ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে। শারীরিক সুস্থতার পথে এক নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হিসেবে প্রতিদিন শুরু হোক এক গ্লাস পানির মাধ্যমে।
ডা. আশরাফুল হক
সহকারী অধ্যাপক
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
মন্তব্য করুন