

সড়কে অসংখ্য গর্ত, খানাখন্দ ও পানি জমে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে মানুষ। এমন ভয়াবহ অবস্থা রাজধানীর মোহাম্মদপুর-বছিলা সড়কের। এ সড়কজুড়ে হালকা বৃষ্টিতেই কাদা জমে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কের বেশকিছু জায়গায় বড় বড় গর্ত। লাখো মানুষের যাতায়াতের এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বছরের পর বছর অবহেলায় পড়ে আছে। রাস্তা নয়, যেন জল-কাদার একটি ফাঁদ। এমন বেহাল সড়ক নিয়ে পুরো এলাকার বাসিন্দারা কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফুর রহমান বলেন, আমি ও আমার শিশুসন্তানদের নিয়ে এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করি। আমার শিশুরা স্কুলে যাতায়াত করতে মাস্ক ব্যবহার করে। এরপরও স্কুল শেষে বাসায় গিয়ে প্রতিদিন তাদের কাপড় ধুয়ে দিতে হয়। আর বর্ষার সময় এ রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে যেতে পারে না। আমরা এমন দুর্দশা থেকে মুক্তি চাই।
শুধু এই সড়ক নয়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে, পাড়া-মহল্লা এবং আবাসিক এলাকার অনেক সড়কেরই এখন করুণ দশা। এবড়োখেবড়ো আর খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেক সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় পিচ উঠে গেছে। কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। উন্নয়নের নামে কেটে-খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। দুই কোটি মানুষের নগরীতে খানাখন্দ-গর্তে পড়ে যানবাহন ও যাত্রীদের নাকানিচুবানি খাওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে সড়কের মেরামত ও উন্নয়ন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। শিগগির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক সংস্কার করা হবে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেহাল মাদানী অ্যাভিনিউ ১০০ ফুট সড়কটি। ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থরা বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, হাতিরঝিল সড়কটির অবস্থা বেহাল। পুরো হাতিরঝিলের জায়গায় জায়গায় অসংখ্য গর্ত। একই অবস্থা রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের মুখ থেকে শুরু করে নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে। সিপাহিবাগ বাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। দয়াগঞ্জ মোড় থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত গেন্ডারিয়া নতুন সড়কটি জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত। গর্তের আকার এত বড় যে, সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় কয়েক ফুট পানির নিচে। এ ছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজের সামনের অতীশ দীপঙ্কর সড়কটি তিন বছরের বেশি সময় ধরে ভোগাচ্ছে মানুষকে। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কটি খানাখন্দে ভরা। রোগী ও স্বজনদের জন্য এক নতুন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ কাউকে বহনকারী রিকশা কিংবা অ্যাম্বুলেন্স খানাখন্দে আটকে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটিসহ আশপাশে বিভিন্ন রাস্তায় নানা অংশ কেটে রাখা হয়েছে। খননকাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভরাট করা হয়নি। পাশে পড়ে থাকা এক্সক্যাভেটর রাস্তা দখল করায় পথ আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মুগদা থেকে মান্ডা সড়কটির অবস্থাও বেহাল।
একই অবস্থা চকবাজার ও এর আশপাশের এলাকায়। বিশেষ করে, জেলখানা রোড থেকে চকবাজার পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে বড় বড় গর্ত দেখা যায়। পোস্তগোলা, শাহীন মসজিদ, ইসলামগঞ্জ, জয়নক রোড, কেল্লার মোড়ের রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। পোস্তগোলা থেকে শাহীন মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের খানাখন্দে ভরা ছিল। কোথাও পাইপ স্থাপন কিংবা পলেস্তারার কাজ চলমান রয়েছে। জয়নক রোড ও কেল্লার মোড়ের রাস্তায় অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। বংশাল থেকে গুলিস্তানমুখী মূল সড়কের অর্ধেক কাটা থাকায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া হজক্যাম্প থেকে শুরু করে কাওলার বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ অংশেই বড় বড় গর্ত। দিনের বেশিরভাগ সময় এ সড়কে চলাচল করা গাড়িগুলো ভাঙা রাস্তার গর্তে আটকে যায়। বিমানবন্দর থেকে রাজলক্ষ্মীর সামনে ফুটওভার ব্রিজটির নিচের রাস্তায় বিশাল এলাকাজুড়ে গর্ত হয়ে আছে। উত্তরার পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়ক থেকে শুরু করে বিআরটির নিচের আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়ক অসংখ্য ছোট বড় গর্তে ভরা। বৃষ্টি নামলে এ পুরো এলাকা বড়সড় পুকুরে পরিণত হয়।
ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে মানিকনগর বাজার সড়কটি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী। পুরো সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ। এর মধ্যে ধলপুর কমিউনিটি থেকে সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। রিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনা অহরহ। আর সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানিকনগর বাজার পর্যন্ত সড়কটির একপাশ জুড়ে কেটে রাখা হয়েছে। অন্য পাশেও রয়েছে অসংখ্য গর্ত। গাড়ি চলাচলও অনুপযোগী। একটু বৃষ্টি হলে হেঁটে চলাচলও দায়। গত এক বছর থেকে খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। চলাচলে দুর্বিষহ জীবন কাটালেও সিটি করপোরেশন কোনো খেয়ালই করছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে সব মিলিয়ে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে। ৭৫টি ওয়ার্ডের সড়ক খাতে ১৪৮ কোটি টাকার ১২৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। ঢাকা উত্তর সিটিতে সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে নতুন যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডসহ প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার সড়ক এখনই সংস্কারের প্রয়োজন, যা মোট সড়কের প্রায় ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর উন্নয়ন খাতে সড়ক, নালা ও ফুটপাত নির্মাণে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৬৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান কালবেলাকে বলেন, ‘সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশন প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা খরচ করে। তাহলে সড়ক টেকসই হয় না কেন? বরাদ্দ হওয়া টাকার পুরোটা সড়ক সংস্কারে খরচ হয় না। কাজ শুরুর আগেই কমিশন ও ভাগাভাগিতে বরাদ্দের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রভাবশালীর পকেটে চলে যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদার নিয়োগ হয় এবং নিম্নমানের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহৃত হয়। ফলে সড়ক টেকসই হয় না। এ সংস্কৃতি এখন পাল্টাতে হবে।’
ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে রাস্তার সংস্কার টেকসই হয় না। প্রলম্বিত বৃষ্টিপাতের জন্য ডিএসসিসির আওতাধীন বিভিন্ন সড়কের মেরামত ও উন্নয়ন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগুলো সংস্কার করা হবে।’
মন্তব্য করুন