

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে মিথেন গ্যাস নির্গমন কমানোর আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশ। যদিও বিশ্ব মিথেন দূষণ মোকাবিলায় কিছু অর্থবহ অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবু বর্তমান প্রচেষ্টা বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকার পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর জন্য দেশগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গতকাল ১৮ নভেম্বর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) এবং জলবায়ু ও পরিষ্কার বায়ু জোট (সিসিএসি) দ্বারা প্রণীত গ্লোবাল মিথেন স্ট্যাটাস রিপোর্টে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতি চার বছর পরপর দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করেছে, তা এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনো বিপজ্জনক মাত্রায় বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ফলে নির্গমন অনুমান অপেক্ষা কিছুটা কম হয়েছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় কঠোর বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস বাজারের বৃদ্ধির মন্দা এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। ফলে অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে মিথেনের মাত্রা বর্তমানে যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার চেয়ে কম হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি দেশ তাদের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে এবং বাস্তবায়ন করছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে জমা দেওয়া নতুন ও হালনাগাদকৃত জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) এবং জাতীয় মিথেন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মিথেন নির্গমন ৮ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে—যদি এসব পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়। এক্ষেত্রে এটি হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টেকসই মিথেন হ্রাস।
তবে প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মিথেন অঙ্গীকারের অধীনে ঘোষিত ৩০ শতাংশ হ্রাস অর্জন করা না গেলে এর প্রভাব হবে বৈশ্বিক। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে কৃষি খাতে; দেখা দিতে পারে খাদ্যঘাটতিও।
প্রতিবেদনে মিথেন গ্যাস নির্গমন কমাতে সাশ্রয়ী, ব্যয়-কার্যকর প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তেল ও গ্যাস খাতের পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে নির্গমন রোধে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী মেরামত এবং ধান চাষের ক্ষেত্রে উন্নত জল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের বিভিন্ন কূপ থেকে মিথেন গ্যাস নির্গমন অব্যাহত রয়েছে। জ্বালানি খাত থেকেই বিশ্বের প্রায় ৭২ শতাংশ মিথেন গ্যাস নির্গমন ঘটে।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের মিথেন নিঃসরণ হ্রাসে ২০২৩ সালের শিল্প আয়ের মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় করলেই তা সম্ভব। এজন্য উন্নত দেশগুলোর এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক মিথেন নিঃসরণ হ্রাসের ৭২ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে জি২০ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে। বিশ্বের এ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে সম্মিলিতভাবে নির্গমন এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমাতে পারে—যদি তারা আন্তরিক হয়। এজন্য মিথেন গ্যাস নির্গমনকারী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতেও বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের দিন ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০ সম্মেলনস্থলে ‘গ্লোবাল মিথেন অঙ্গীকার’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় কানাডার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী এবং অঙ্গীকারের সহ-আহ্বায়ক জুলি ডাব্রুসিন বলেন, ‘এ প্রতিবেদনটি আমাদের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় কাজের মূল সূচক। আমরা উন্নতি করেছি, তবে আমাদের অবশ্যই দ্রুত এবং আরও গভীর মিথেন হ্রাস চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি টন হ্রাস আমাদের আরও পরিষ্কার বায়ু, স্থিতিশীল সম্প্রদায় এবং একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির কাছাকাছি নিয়ে যায়।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি ও গৃহায়ন কমিশনার ড্যান জর্গেনসেন বলেন, ‘বিভিন্ন খাত ও দেশ এবং কোম্পানিগুলো প্রমাণ করছে যে, মিথেন হ্রাস অর্জনযোগ্য। আমাদের এখন কাজ হলো এ সমাধানগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। একসঙ্গে কাজ করে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা নাগালে রাখা সম্ভব।’
ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গার অ্যান্ডারসেন বলেন, ‘মানবস্বাস্থ্য রক্ষা এবং জলবায়ু সংকট শিথিল করার জন্য মিথেন নির্গমন হ্রাস এখন সবচেয়ে তাৎক্ষণিক এবং কার্যকর পদক্ষেপগুলোর একটি।
এটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে—এর কোনো বিকল্প নেই।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, এখন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্ব দ্রুততম ও সাশ্রয়ী সমাধানটি কাজে লাগাতে পারবে কি না। যদি সিদ্ধান্তমূলকভাবে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, এবং স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন ও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
মন্তব্য করুন