বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ৩১ আশ্বিন ১৪৩২
হাসান আজাদ
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ১৫ মে ২০২৪, ০৯:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডলার সংকটে দেনা বাড়ছে পিডিবির

তীব্র হবে লোডশেডিং
ডলার সংকটে দেনা বাড়ছে পিডিবির

মার্কিন ডলারের অভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সময়মতো দেনা মেটাতে না পারায় বড় অঙ্কের সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এদিকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে; এ অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখনই ডলার সংকটে কয়লা, গ্যাস আমদানি প্রয়োজন অনুযায়ী করা যাচ্ছে না। যার প্রভাবে লোডশেডিং বাড়ছে। সামনে বিদ্যুতের উৎপাদন-সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে তীব্র লোডশেডিং হতে পারে বলে জানিয়েছেন পিডিবির কর্মকর্তারা।

এদিকে আজকের এ পরিস্থিতির জন্য সরকারের ভুল পরিকল্পনা দায়ী বলে মনে করছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত দেশকে কোন দিকে নিয়ে যাবে—এটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ আইন তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই মনমতো দামে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এর প্রভাব এখন অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতির সংকটের ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের সৃষ্ট। বিষয়টির নিয়ে পিডিবির কোনো কর্মকর্তাই আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক এবং জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, বিদ্যুৎ খাত খুবই সংকটময় অবস্থায় পড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ভালোভাবে চালাতে বছরে ২০ থেকে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। মাসে দুই বিলিয়ন ডলার। কিন্তু প্রতি মাসে এ পরিমাণ অর্থ দিতে পারছে না সরকার। কারণ সরকার যথাসময়ে যথাযথ কাজটি করেনি। বিশেষ আইন করে নিজস্ব লোকদের উচ্চদামে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিও করেছে নিজেদের মতো করে। এখন পাওয়ার প্লান্ট আছে, জ্বালানি নেই। কিন্তু প্লান্ট বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পাওয়ার প্লান্ট করার সময় জ্বালানি কোথায় পাওয়া যাবে, তা আমলে নেওয়া হয়নি। সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে দায়-দেনা পরিশোধে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি প্রয়োজন হবে। আর সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে সুদসহ দেনার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে কয়লাভিত্তিক বেসরকারি খাতের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে কয়লা আমদানির বিল ৮৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ ৭১৭ মিলিয়ন, পিডিবির নিজস্ব আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঋণের কিস্তি ১১৫ মিলিয়ন ডলার, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ২২৬ মিলিয়ন এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ কেনায় ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এ অর্থ পরিশোধে সরকারের কাছ থেকে এখনো ডলার পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ কথা বলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে চলতি বছরের জানুয়ারির বিল ১৪৪ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারির ১৬০ দশমিক ৫ মিলিয়ন, মার্চের ১৬৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৭১ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন, মে মাসের ১৬৫ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ও জুনের জন্য ১৬৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে।

কয়লা আমদানির বিপরীতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের জন্য ১০২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন, ফেব্রুয়ারির ১০৮ দশমিক ৮০ মিলিয়ন, মার্চের ১৩৪ দশমিক ৯২ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৩০ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন, মের ১৩১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ও জুনের ১২৭ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের রয়েছে ২৯৩ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার, রামপালের ২০৩ দশমিক ৪০ মিলিয়ন, এসএস পাওয়ারের ১৫৯ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন এবং বরিশাল ইলেকট্রিকের প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বাইরে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কিস্তি দিতে হবে মার্চের ৮৬ মিলিয়ন ডলার ও জুনের ১৪০ মিলিয়ন ডলার।

এ ছাড়া পিডিবির আটটি কেন্দ্রের ঋণের কিস্তি জানুয়ারির জন্য পরিশোধ করতে হবে ২৪ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারির ১৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন, মার্চের ১৭ দশমিক ১৯ মিলিয়ন, এপ্রিলের ১৭ দশমিক ১৫ মিলিয়ন, মে মাসের জন্য ছয় দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ও জুনের ৩১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার। আর পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি কেনার জন্য জানুয়ারির বিল বকেয়া পড়েছে ১৩ দশমিক ৬০ মিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন করে মোট ৬০ মিলিয়ন ডলার ও জুনে ২৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, দেনা বাড়তে থাকায় দিন দিন বিদ্যুৎ খাত এক অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। ডলার না পেলে জ্বালানি কেনা যাবে না, বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না। ফলে সংগত কারণেই দেশে লোডশেডিং বাড়বে।

গতকাল পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির দৈনিক উৎপাদন ও সরবরাহের চিত্রে দেখা গেছে, এখন দেশের তাপমাত্রা কম থাকলেও লোডশেডিং হচ্ছে। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরেও পিক আওয়ারে (সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) জ্বালানির অভাবে ১২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। বিকেল ৫টায় ১৬৭ মেগাওয়াট ও বিকেল ৪টায় ২০১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। সামনে এটা আরও বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়লে তীব্র হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোহরাওয়ার্দী হলে ভিপি-জিএসে এগিয়ে শিবির

সোহরাওয়ার্দী হলে পুনরায় ফল গণনার দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

আরেক হলের ফল ঘোষণা, তিন পদেই এগিয়ে ছাত্রদল

হাসপাতালে খালেদা জিয়া

ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন গ্রেটা থুনবার্গ

চবিতে মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

চাকসুর ফল কারচুপির চেষ্টার অভিযোগে শাহবাগে ছাত্রদলের অবস্থান

৩১ দফা বাস্তবায়নে / বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সোহাগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

চবিতে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে ভলকার তুর্কের আহ্বান

১০

বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাল জামায়াত

১১

চাকসু নির্বাচনে আরেক হলের ফল ঘোষণা, ভিপি পদে এগিয়ে ছাত্রদল

১২

গোমতীর চরে আগাম সবজির চাষ, অধিক লাভের আশা কৃষকের

১৩

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে কেশবপুরের তপস্যা

১৪

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

১৫

ইন্দোনেশিয়ায় তেলবাহী ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১০

১৬

রাত থেকে লাইনে নারী-পুরুষ, সকালে মেলে আটা

১৭

ওসিকে অপসারণে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

১৮

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৯

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দিপালী উৎসব কাউনিয়া আদি শ্মশানে

২০
X