চার বছর আগে আজকের দিনে সন্তানকে ভর্তি করার খোঁজখবর নিতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু। সেখানে গেলে পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজবে ছেলেধরা সন্দেহে উৎসুক জনতা গণপিটুনি দেয় তাকে। এতে মৃত্যু হয় রেনুর। এ ঘটনায় করা মামলার এক বছর পর তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ডিবি পুলিশ। এ মামলার বিচারও শুরু হয়। তবে সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত দুই বছরে ৩৬ সাক্ষীর অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে মামলার চার বছর পার হলেও আটকে আছে আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার। বর্তমানে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ১৩ আসামির বিচার চলছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ২৪ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ রয়েছে। এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনের বিচার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ চলছে। এখানে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা, রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ও মহিন উদ্দিন। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় জাফর হোসেন পাটোয়ারী ও ওয়াসিম আহমেদ বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে মহিউদ্দিন পলাতক। বাকিরা জামিনে রয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করাবেন বলে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করেন। এ গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আশপাশ থেকে বিভিন্ন বয়সী কয়েকশ নারী-পুরুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তাদের কবল থেকে রক্ষা করতে রেনুকে স্কুলের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যেই উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন কলাপসিবল গেট ভেঙে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে রেনুকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে কিল, ঘুসি, লাথি মারতে থাকে। এ সময় লাঠি দিয়েও পেটানো হয় তাকে। এভাবে আধঘণ্টা অমানুষিক নির্যাতনের পর মৃত্যু হয় রেনুর। এ ঘটনায় রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবদুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা ওই নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিয়মিত সাক্ষী এলে এ বছরই বিচারকাজ শেষ হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা হবে প্রত্যাশা করছি। মামলার বিষয়ে বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, পদ্মা সেতু তৈরির সময় কিছু মানুষের ভুল তথ্যে খালাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গুজবের কারণে যেন আর কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক যেন সবার কাছে এ ধরনের বার্তা যায়। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক কারণে খালার দুই সন্তানকে পড়ালেখা, ভরণপোষণসহ সার্বিক ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ থাকবে যেন তাদের দুজনের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কোনো ব্যবস্থা করেন।
মন্তব্য করুন