সরকারি-বেসরকারি যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন উপাচার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই পদ ফাঁকা রেখেই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চার ভাগের এক ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদটি ফাঁকা রয়েছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১১৪টি। এর মধ্যে ২৮টিতেই নেই উপাচার্য। এ ছাড়া কোষাধ্যক্ষ নেই ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ কোনোটিই নেই ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গত মঙ্গলবার ইউজিসি থেকে প্রকাশিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষদের সর্বশেষ তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। তালিকা অনুযায়ী, সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫টি। এগুলো হলো রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া মালিকানা সমস্যা, সাময়িক সনদের মেয়াদ পার হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ—এ তিনটি পদে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাষ্ট্রপতি। তবে প্রাথমিক কাজটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব (প্যানেল) আসার পর তারাই সরকারের কাছে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠায়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নামের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলো ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের প্যানেল সরকারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল পাঠায়। পরে সেটি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসে। এরপর থমকে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়।
উপাচার্য নেই ২৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে উপাচার্য নেই খুলনার বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। এ ছাড়া খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে সাড়ে ৩ বছর; বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি ও জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে ৩ বছর; আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে আড়াই বছর; এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব অব বাংলাদেশে ২ বছর; রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ২ বছর এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর দেড় বছর ধরে উপাচার্য ছাড়াই চলছে।
এক বছর বা তার কম সময় ধরে উপাচার্য নেই আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজিতে।
১১টিতে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ শূন্য: বর্তমানে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ খালি হলেই সেগুলো পূরণে ইউজিসিতে তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াসহ নানা কারণে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে দেরি হয়।
চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আনজুমান আরা লিমা কালবেলাকে বলেন, আমাদের দুটো প্যানেলই (উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ) প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত নিয়োগ হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য প্যানেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর উপাচার্য প্যানেল মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পায়নি। এর মধ্যে প্যানেলে থাকা একজন কানাডায় চলে গেছেন। এ কারণে নতুন করে প্যানেল করার চেষ্টা করছে ট্রাস্টি বোর্ড।