ফুটবল মাঠে যেভাবে প্রতিপক্ষদের পরাজিত করেছেন, অর্থনীতির ময়দানেও লিওনেল মেসি যেন এক অপ্রতিরোধ্য যন্ত্র। গোলের পর গোল যেমন তার সিগনেচার, তেমনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও প্রতি বছর যোগ হচ্ছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয়—এই মুহূর্তে সক্রিয় ক্রীড়াবিদদের মধ্যে মেসির চেয়েও বেশি আয় করা অ্যাথলেট আছেন।
স্পোর্টিকো’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চমকপ্রদ এক তালিকা। সেখানে দেখা গেছে, আর্জেন্টাইন তারকার মোট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৮৫ বিলিয়ন ডলার, যা এসেছে বেতন, পুরস্কার, বিনিয়োগ, ইমেজ রাইটস, বই, লাইসেন্স ও উপস্থিতি ফি থেকে। এক কথায়, ‘লা পুলগা’ এখন শুধুই ফুটবল তারকা নন—একটি বহুজাতিক ব্র্যান্ডও।
তাহলে মেসির ওপরে কারা? প্রথমজন, বহু বছরের সেই প্রতিদ্বন্দ্বী—ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ তারকার মোট আয় পৌঁছেছে ২.২৩ বিলিয়ন ইউরোতে। আর দ্বিতীয়জন, আমেরিকার মাটিতে আরেক ‘রাজা’—লেব্রন জেমস, যিনি এনবিএ কোর্টে যেমন রাজত্ব করেন, তেমনি অর্থ উপার্জনেও, মোট আয় প্রায় ১.৮৮ বিলিয়ন ইউরো।
এই তিনজনই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সক্রিয় ক্রীড়াবিদ। তবে যদি অবসরে যাওয়া কিংবদন্তিদের ধরা হয়, তখন ছবিটা আরও বড় হয়। সর্বকালের শীর্ষে রয়েছেন মাইকেল জর্ডান, যিনি জীবদ্দশায় ও পরবর্তীতে ব্র্যান্ডিং থেকে অর্জন করেছেন ৪.১৫ বিলিয়ন ডলার। তার পরেই আছেন গলফ কিংবদন্তি টাইগার উডস—মোট ২.৭৯ বিলিয়ন ডলার আয়ের মালিক।
মজার বিষয় হলো, মেসি এই বিশাল অঙ্কের অনেকটাই গড়েছেন শুধু মাঠে নয়, বরং মাঠের বাইরের বিনিয়োগ থেকেও। হোটেল ব্যবসা, ব্র্যান্ড লাইসেন্স, এমনকি বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে সঙ্গে নিয়ে উরুগুয়েতে নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠা—সবই তার ভবিষ্যতের বড় পরিকল্পনার অংশ। ফুটবল থেকে অবসরের পরও যেন আয়ের স্রোত থেমে না যায়, সে পথই প্রস্তুত করছেন তিনি।
আর একভাবে বলতে গেলে, এই তালিকায় মেসি একা নন। তার বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহ-মালিক ডেভিড বেকহ্যামও আছেন শীর্ষ ধনী তালিকায়, যার মোট আয় প্রায় ১.৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০০৭ সালে বেকহ্যামের লস অ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সিতে যোগদানই ছিল ইউএস বাজারে ফুটবলের অর্থনৈতিক বিপ্লবের সূচনা। সেই পথেই হেঁটে আজ মেসি আমেরিকাতেও হয়ে উঠেছেন এক ‘গ্লোবাল এম্পায়ার’।
খেলা থামলেও অর্থের প্রবাহ থামে না—এ কথার জীবন্ত প্রমাণ লিওনেল মেসি। মাঠে যেমন ইতিহাস গড়েছেন, অর্থনীতির ময়দানেও যেন তিনি লিখছেন নতুন অধ্যায়—যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী কেবল দুইজন, আর বাকিরা দূরে, অনেক দূরে।
মন্তব্য করুন