রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে দেশে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। তাই ২০১৪ সালে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুবিধাসংবলিত বহুতল ভবনবিশিষ্ট ‘পল্লি জনপদ’ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল কৃষিজমি অপচয় রোধে সমবায় ভিত্তিতে আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে উন্নত আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি। এতে একদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অন্যদিকে গ্রামীণ জনগণ ফ্ল্যাটে বসবাসের স্বাদ পাবে। এই ‘পল্লি জনপদ’ নির্মাণ প্রকল্প ঘিরে গ্রামের মানুষের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে শুরু হওয়া ‘পল্লি জনপদ’ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এক দশকেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। বরং আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়াতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এজন্য প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করেছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। ফলে তিন বছরমেয়াদি গ্রামীণ মানুষের স্বপ্নের ফ্ল্যাট প্রকল্প গড়াচ্ছে ১২ বছরে। আর খরচ বাড়ছে ৪৫ কোটি টাকা।
বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ‘পল্লি জনপদ’ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) বগুড়া। প্রকল্পের আওতায় রংপুর, রাজশাহী এবং ঢাকা বিভাগে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এক দশকে শুধু রংপুরের কাজ শেষ হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বাকি কাজগুলো শেষ করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটি ২০১৪ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু ঠিকাদারদের অবহেলায় নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রথম দফায় এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু আট বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি প্রকল্পটি। ফলে প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধন করা হয়। এতে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বারবার সংশোধন এবং মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে মেয়াদ বাড়াতে চায় আরডিএ। এজন্য আরও দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশোধনের কারণ হিসেবে আরডিএ জানিয়েছে, মূল ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি হিসেবে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৪ অনুযায়ী চুক্তি সই হয়। পরবর্তী সময়ে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৮ ও ২০২২ সালে দুবার সংশোধিত হয়। ফলে বিএমটিএফ স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৪ অনুযায়ী বাকি কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। বর্তমানে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০২২ অনুসরণ করে আরডিপিপি প্রস্তুত করে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মানা হয়নি উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা। নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত তিন মাস আগে প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগে তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৪ জুলাই আলোচ্য প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় প্রকল্পের ধীরগতির কারণ এবং সংশোধনী প্রস্তাবে বিভিন্ন খাতের ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও আরডিএর যুগ্ম পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মূলত পিডব্লিউডির রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে প্রথম দিকে কাজ শুরু করতেও দেরি হয়েছিল। ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী বিএমটিএফের সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে তারা কাজ করতে চাচ্ছে না। ফলে মাঝপথে কয়েক বছর কাজ বন্ধ ছিল। এ কারণে নতুন রেট শিডিউল অনুসরণ করতেই প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। যে কারণে কিছু খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।