আ ন ম আমিনুর রহমান
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:০৬ এএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিহঙ্গকথা

বিরল পাখি তামাটে ঈগল

বিরল পাখি তামাটে ঈগল

বাদামি ঈগলের (Steppe Eagle) ছবি তুলে খুশিমনে রাজস্থানের ভরতপুর পক্ষী অভয়ারণ্যের প্রধান সড়ক ধরে হাঁটছিলাম। রাস্তার দুধারের জলাভূমিতে প্রচুর পাখি ও বন্যপ্রাণী। প্রায় প্রতিটি পাখি-প্রাণীই ব্যস্তভাবে খাবার খাচ্ছে। অবশ্য যেগুলো রাত বা ভোরবেলায় খেয়েছে, সেগুলোর কথা আলাদা, সেগুলো বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আমি ও প্রফেসর ডা. নাজমুল ভাই ক্যামেরা হাতে ব্যস্তভাবে একবার রাস্তার ডান ও একবার বাঁ দিকের জলাভূমির দিকে যাচ্ছি। আমাদের রিকশাওয়ালা কাম গাইড ধীরে ধীরে রিকশায় প্যাডেল মেরে পিছু পিছু আসছেন। হাঁটতে হাঁটতে একটি সোনাজঙ্ঘার (Painted Stork) ছানা ও একটি সাপগলাকে (Steppe) পালকের যত্ন নিতে দেখলাম। একটি বড় পানকৌড়ি (Great Cormorant) চুপচাপ বসে আছে। খানিকটা দূরে কতগুলো মিশ্র প্রজাতির হাঁস বসে ঝিমুচ্ছে। চার-পাঁচটি কাদম্ব রাজহাঁস (Greylag Goose) মনের আনন্দে জলায় ভেসে বেড়াচ্ছে। একটি সোনাজঙ্ঘা সুন্দর ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। একজোড়া লেনজা হাঁস (Northern Pintail) পানিতে ডুব দিয়ে খাবার সংগ্রহ করছে। একটি ধূসর বক (Grey Heron) এমনভাবে সামনের দিকে উড়ে এলো, মনে হলো যেন আমার ঘাড়ের ওপর পড়বে। বকটি আমার ঠিক দুই মিটার সামনে এসে নামল। একটুও ভয় পেল না। সেটির ছবি তোলা শেষে জলায় দাঁড়ানো একটি মরা গাছের মগডালে বড় আকারের একটি ঈগলকে বসে থাকতে দেখলাম। পাখিটিকে আগে কখনো দেখিনি। খয়েরি-বাদামি পালকের পাখিটির মধ্যে কেমন একটা রাজকীয় ভাব রয়েছে।

প্রায় সোয়া তিন মিনিট ধরে সেটির ছবি তুললাম। নতুন আরেকটি পাখি আমার পক্ষিতালিকায় যোগ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।

এতক্ষণ ভরতপুরের যে ঈগল পাখিটির কথা বললাম, সেটি বাংলাদেশের বিরল ও তথ্য অপ্রতুল ভবঘুরে পাখি তামাটে ঈগল। খয়েরি ঈগল নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে সেটির নাম ওকাব। ইংরেজি নাম Tawû Eagle। দিনের শিকারি অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae) বা বাজ গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Aquila rapax (অ্যাকুইলা রাপাক্স)। পাখিটিকে ঢাকা ও সিলেট বিভাগের প্রান্তরে এবং নদীতীরে দেখার তিনটি তথ্য রয়েছে। সেগুলো রোমানিয়া থেকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, মঙ্গোলিয়া, ভারতের দক্ষিণাঞ্চল ও আফ্রিকার (সাহারার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল) আবাসিক পাখি।

প্রাপ্তবয়স্ক তামাটে ঈগলের দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার, প্রসারিত ডানা ১৫৯ থেকে ১৮৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ১.৬ থেকে ৩.১ কেজি। দেহের ওপরের পালকের রং লাল থেকে

বাদামি-কালো বা তামাটে। দেহের নিচের দিক বাদামি; তাতে পীতাভ আভা থাকতে পারে। লেজ ও ডানার ওড়ার পালক কালচে এবং এর নিচের দিকের ডোরাগুলো অস্পষ্ট। পিঠের পেছন দিকটা অত্যন্ত ফ্যাকাশে। মুখব্যাদান ও মুখের সংযোগস্থল লেবু-হলুদ। চোখ

হলুদ-বাদামি। হলুদ চঞ্চুর আগা কালো। পা ও পায়ের পাতা হলুদ; নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও আকারে স্ত্রী পাখি খানিকটা বড়। বাদামি ঈগল থেকে ওরা আকারে ছোট ও ফ্যাকাশে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি প্রাপ্তবয়স্কগুলোর চেয়ে ফ্যাকাশে ও বেশি দাগছোপযুক্ত। ডানার পালক-ঢাকনির প্রান্ত সরু ও সাদা। মাথা, গলা ও বুক কালচে এবং পেট ফ্যাকাশে। ডানার পালক-তল ঢাকনিতে কালচে ফিতে থাকতে পারে।

তামাটে ঈগল পত্রঝরা বনের প্রান্ত, নদীতীর, হ্রদ, আধা-মরুভূমি ও কৃষি জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ ইত্যাদি খায়। অন্য শিকারি পাখির শিকারও ছিনতাই করতে পারে। ওদের অন্যান্য ঈগল, শকুন, কাক, শিয়াল ও হায়েনার সঙ্গে মরা-পচাও খেতে দেখা যায়। আফ্রিকায় ওদের মরা হাতির মতো বড়ো প্রাণী থেকে ভারবেট বানরের মৃতদেহও খেতে দেখা গেছে। সচরাচর ওরা নীরব পাখি, কদাচ ‘কাও-কাও ...’ শব্দে ডাকতে পারে।

নভেম্বর থেকে এপ্রিল প্রজনন মৌসুম। এ সময় আবাস এলাকার কোনো উঁচু গাছ (গড়ে ১১ মিটার উঁচু), পাহাড়ের চূড়া বা ভূমিতে কাঠিকুটি দিয়ে প্রায় এক মিটার ব্যাসবিশিষ্ট ও ২০ সেন্টিমিটার গভীর বাসা বানায়। প্রতি বছর নতুন বাসা তৈরি করে। অনেক সময় অন্য শিকারি পাখিদের বাসাও দখল করতে পারে। স্ত্রী বাদামি ছিটছোপযুক্ত ১ থেকে ৩টি সাদাটে ডিম পাড়ে ও একাই তা দেয়। অনেক সময় পুরুষকেও ডিমে তা দিতে দেখা যায়। ডিম ফোটে ৪০ থেকে ৪৪ দিনে। প্রতি মৌসুমে সচরাচর বাসাপ্রতি একটির বেশি ছানা বড় হতে পারে না। কারণ আগে ফোটা ছানাটি খাদ্য খাওয়ার প্রতিযোগিতায় ছোট ছানাগুলোকে ঠুকরে ঠুকরে রক্তাক্ত করে মেরে ফেলে। ছানারা ১১ থেকে ১২ মাসে স্বাবলম্বী হয় ও নীল আকাশে ডানা মেলে। বয়ঃপ্রাপ্ত হয় ৩ থেকে ৪ বছরে। আয়ুষ্কাল ১৬ থেকে ১৭ বছর।

লেখক: পাখি, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় হামাসের বন্দুকধারীদের টহল

আগামীর রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্ণ রূপরেখা ৩১ দফাতেই রয়েছে : কফিল উদ্দিন 

পরিবেশ রক্ষায় ৮০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে : টুকু 

ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান গড়বে বিএনপি : আমিনুল হক

মিসরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেন ট্রাম্প

নেইমারের জন্য এখনও দরজা খোলা রেখেছেন আনচেলত্তি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ও প্রফেশনাল কোর্সের সব পরীক্ষা স্থগিত

ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে

পলিথিনে মোড়ানো শপিং ব্যাগে মিলল নবজাতকের মরদেহ

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

১০

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

১১

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

১২

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

১৩

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

১৪

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

১৫

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

১৬

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

১৭

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

১৮

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১৯

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

২০
X