ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বহুতল ভবনগুলোতে এডিস মশার প্রজননস্থল সবচেয়ে বেশি, যা মোট প্রজননস্থলের ৫১ শতাংশের বেশি। বিশেষ করে ছাদবাগানের পরিত্যক্ত বালতি, টব, মগ ইত্যাদিতে মশার বেশি প্রজনন ঘটছে। নভেম্বরের ৪ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পরিচালিত এডিসের মৌসুম জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির ২১টি এবং দক্ষিণের ৩৫টি ওয়ার্ডে এডিসের প্রজনন হার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর এডিস মশার গতি-প্রকৃতি জানতে তিনটি জরিপ পরিচালিত হয়। এ বছর প্রাক-মৌসুম ও মৌসুম জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মৌসুম জরিপের ফল প্রকাশ করবে।
এর আগে জলমগ্ন ভবনে এডিসের প্রজননস্থল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যেত। এবারই প্রথম বহুতল ভবনে এডিসের সর্বোচ্চ প্রজননস্থল পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (লিম্ফেটিক ফাইলেরিয়াসিস এবং এসটিএই ও এলডি) ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ছাদবাগানগুলো পরিচ্ছন্ন থাকলেও আশপাশে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত মগ, পানির পাত্র, বালতি বা টবে পানি জমে আছে। সেখানেই মশার প্রজনন ঘটছে। এ ছাড়া ছাদের পানির ট্যাঙ্কের নিচে, ছাদের পানি অপসারণের নালায় এবং পানির পাম্পের গর্তে এডিসের লার্ভাসাইট বা প্রজননস্থল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এর বাইরে কাঁচাবাজার, শপিংমল ও খোলা স্থানে ফেলে দেওয়া পলিথিনের ব্যাগে, চিপসের প্যাকেট এবং একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পাত্রে জমে থাকা সামান্য পানিতে মশার ডিম, লার্ভা পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের মৌসুম জরিপের ফলে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৫টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ৫৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননহার (ব্রুটো ইনডেক্স) সর্বোচ্চ বা ২০-এর বেশি। উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬ ওয়ার্ডে এডিসের প্রজনন হার অপেক্ষাকৃত কম, তবে ১০-এর বেশি। শূন্য সংক্রমণের হার উত্তর সিটির কোনো ওয়ার্ডে না থাকলেও দক্ষিণে একটি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স শূন্য।
জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ব্রুটো ইনডেক্স বা গড় সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটিতে এই হার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এই দুই সিটির বাড়িতে ব্রুটো ইনডেক্স যথাক্রমে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। দুই সিটিতে কনটেইনার ইনডেক্স অনেক বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে কনটেইনার ইনডেক্স ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে এই হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঢাকার দুই সিটির ৩ হাজার ১৩৪টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ৫৪৬টি বাড়িতে ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক এডিস মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে বহুতল ভবনে এডিস মশার প্রজননস্থল সবচেয়ে বেশি ৫১ শতাংশ। এ ছাড়া নির্মাণাধীন বাড়িতে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়িতে ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ফাঁকা প্লটে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে ডেঙ্গুর মৌসুম পরিবর্তন হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি রোগী এবং নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এমনকি ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষণীয়, যা উদ্বেগের। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, এবার মৌসুম জরিপ প্রলম্বিত সময়ে করা হয়েছে। আমাদের ওপি (অপারেশনাল প্ল্যান) বন্দ থাকায় যথাসময়ে জরিপ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। জরিপের ফল আমরা সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে জানাব। যাতে সবাই মিলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জনসচেতনতা বাড়ানো। জনসচেতনতা বাড়লে এডিস মশা ও ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।