প্রদীপ মোহন্ত, বগুড়া
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বগুড়া

আলুগাছে ধরেছে টমেটোও

আলুগাছে ধরেছে টমেটোও

একই গাছে মাটির নিচে ফলেছে আলু আর ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল-সবুজ-­হলুদ টসটসে টমেটো। গ্রাফটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে একই গাছে দুধরনের সবজি চাষে সফলতা অর্জন করেছেন বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তা রুবেল মিয়া।

শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা এলাকার বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এগ্রো ফার্ম এই গ্রাফটিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করে চাষাবাদ করেছে। আলুগাছে ধরেছে টমেটো। হাজারখানেক গাছে ট্রায়াল দিয়ে এই চাষ করে হয়েছেন সফল। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে একই গাছে দুই সবজি চাষের নাম দিয়েছেন ‘টমালু’।

যদিও টমালু চাষের মূল কারিগর রুবেল মিয়া। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তিনি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে আগ্রহ ছিল রুবেল মিয়ার। পরে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)-তে। সে সময় এ ধরনের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করান শিক্ষকরা।

ভার্সিটি শেষ করে কৃষির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। নিজ বাড়ি মোকামতলার চৌকিরঘাট এলাকায় হাইওয়ের পূর্বপাশে পাঁচ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন কৃষিবন্ধু এগ্রো ফার্ম নামে নার্সারি। এর কিছুদিন পর কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের নার্সারিতে নতুন নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করা শুরু করেন। এর মধ্যে ‘টমালু’ চাষ অন্যতম। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে বেগুন গাছেও গ্রাফটিং করে টমেটো চাষ করেছিলেন তিনি।

কৃষি কর্মকর্তা রুবেল মিয়া বলেন, মূলত আলু ও টমেটো একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এই চাষে সফলতা এসেছে। ‘টমালু’ গাছে রুটস্টক বা গোড়া হিসেবে আলুর চারা আর সায়ন হিসেবে টমেটোর চারা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দুটি চারার বয়সই সমান হতে হবে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও এস্টোরিক জাতের আলুর সঙ্গে বাহুবলী জাতের টমেটোর চারা জোড়া দিয়ে তিন শতক জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। এতে সফলতা পেয়েছি। নিতান্ত শখের বশে এই বিশেষ চাষবাদে হাত দেন বলেও জানান তিনি।

রুবেল মিয়া আরও বলেন, খরচ কম হলেও ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তা ছাড়া দিন দিন দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। তাই একই গাছে একাধিক ফসল হলে সুবিধা। এই পদ্ধতিতে পরিচর্যাতেও কোনো বাড়তি ঝামেলা নেই। একই জমিতে কাপ করে একই খরচ ও একই জৈবসার ব্যবহার করায় এ পদ্ধতি কৃষকের জন্য লাভজনক। আলুর গাছে কলম করাও বেশ সহজ। যারা গ্রাফটিং করে তাদের কাছ থেকে শিখে নিজেরাই করা যায়। গ্রাফটিংয়ের ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই গাছ জোড়া লেগে যায়। নিজের নার্সারিতে সফলতা পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের কাছে এ উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রুবেল মিয়া।

চাষবাদ পদ্ধতিটি সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে আলাদা জায়গায় টমেটো ও আলুর চারা তৈরি করে নিতে হবে। চারা গাছের বয়স হবে ২৫-৩০ দিন। আর উচ্চতা হতে হবে ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। আলু চারার সঙ্গে টমেটো চারা গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আলু চারার আগা ও টমেটো চারার গোড়ার অংশ কেটে নিতে হবে। জোড়া লাগলে পলিথিন খুলে ফেলতে হবে। বর্তমানে কৃষিবন্ধু এগ্রো ফার্মের দায়িত্বে আছেন নারী উদ্যোক্তা জান্নাতি খাতুন।

তিনি জানান, টমালুর প্রতিটি গাছে প্রায় সাড়ে ৪ কেজি করে টমেটোর ফলন হয়েছে। অন্যদিকে আলুর ফলন হয়েছে এক কেজি ১০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত। অনেকেই শুনে এ পদ্ধতি দেখতে আসছেন এবং তাদের ছাদবাগানে এই চাষ করবেন বলে ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন। জান্নাতি আরও বলেন, তারা এখানে বর্ষা মৌসুমে বেগুন গাছে গ্রাফটিং করে অসময়ে টমেটোও ফলান। কারণ বর্ষার সময় টমেটো গাছ পচে বা ভেঙে গেলেও বেগুন গাছ অনেক শক্ত। পাশের উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারপুর থেকে ফার্ম এসেছেন সবজিচাষি জাহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অল্প জমিতে এই চাষ বেশ ভালো হবে। একসঙ্গে দুটো সবজি চাষ করে লাভবান হতে পারব।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান পাপ্পু জানান, আলু সংগ্রহের পর মাটি দিয়ে ফের গাছের গোড়া ঢেকে পানি দিলেই পরবর্তী চার মাসের মধ্যে টমেটোর পূর্ণ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, শিবগঞ্জের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন সম্ভব। রুবেল মিয়ার সফল পরীক্ষামূলক উদ্যোগে কৃষি অফিস সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১০

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১১

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১২

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৩

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

১৪

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৫

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১৬

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১৭

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১৮

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

১৯

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

২০
X