সমীক্ষা ছাড়াই রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ দিগুণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। রাজস্ব আয় না বেড়ে উল্টো তলানিতে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে আবাসন খাত থেকে রাজস্ব আদায়। এ পরিস্থিতিতে নতুন আয়কর আইনের ধারায় জারি করা প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করছে রাজস্ব বোর্ড। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন কেউ।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর দ্বিগুণ করে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে আগ্রহ কমে গেছে ক্রেতাদের। শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়ই জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। আর নিবন্ধন কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ও কমে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, রাজধানী ও এর আশপাশের ১৭টি কার্যালয়ে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয়। এসব কার্যালয়ে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের সময় উৎসে কর কেটে রাখা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ ১৭টি কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত আয়কর আদায়ের হিসাব নিয়েছে। তাতে দেখা গেছে, গত জুলাইয়ে মাত্র ৩২ কোটি টাকার নিবন্ধন কর পাওয়া গেছে। অথচ এর আগের বছর ২০২২ সালের জুলাইয়ে নিবন্ধন করের পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি টাকা। আগস্ট মাসেও নিম্নমুখী ছিল আয়কর আদায়। সর্বশেষ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আগস্টের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ২৪ দিনে আবাসন খাত থেকে উৎসে কর বাবদ এনবিআর পেয়েছে ৭৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময় সবমিলে ছিল ১২৬ কোটি টাকা। এদিকে, চলতি অর্থবছর আবাসন খাতের নিবন্ধন থেকে উৎসে কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর ১ মাস ২৪ দিনে আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ২ শতাংশ। এতে আবাসন ব্যবসায়ীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনি মুখ থুবড়ে পড়েছে এ খাতের রাজস্ব আহরণ।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ বাড়ায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কেনাবেচা। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। অথচ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্যই উৎসে কর বাড়ানো হয়েছিল। আর রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়ায় এনবিআর এ খাতে উৎসে কর ফের সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনে উৎসে কর আবার আগের মতো হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। তারা বলছে, জমি ও ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়ালে আয়কর বাড়বে না। ব্যবসায়ীদের মতামত আমলে না নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।
রিহ্যাবের সহসভাপতি কামাল মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, ড্যাবের কারণে নতুন করে প্ল্যান পাস হচ্ছে না। আর আমরা উৎসে কর কমানোর বিষয়ে আগে থেকেই বলে আসছি। কিন্তু এটা না কমিয়ে বরং বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে নিবন্ধন খরচ বেড়ে গেছে। আর এনবিআর কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে সাময়িক কিছুটা লাভ হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা রয়ে গেল বলেও মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, এনবিআর জমি ও ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যে স্ল্যাব করে দিয়েছে, এতে রাজস্ব আদায়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে জমি-সংক্রান্ত চুক্তি করছে। অনেকে আবার পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে করছে। সবমিলে স্ল্যাবের কারণে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এতে নিবন্ধন অনেক কমে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন