নাজমুল হাসান সাগর
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদা আদায়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখাতেন রাব্বি

ফ্ল্যাট-জমি দখলে গড়েছেন নিজস্ব চক্র
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মোবাইল ফোনসেট মেরামতকারী আহমেদ খান প্রতিদিনের মতো মোহাম্মদপুর টোকিও স্কয়ারের দোকান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। মার্কেটের সামনেই পথরোধ করেন দুই যুবক। কথাবার্তার মাঝেই পুলিশ টহল গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সাদা পোশাকে থাকা দুই যুবক জোর করে তাকে গাড়িতে তোলেন। গাড়িটি গিয়ে থামে বছিলা ৪০ ফিট এলাকায়। সেখানে তাকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকিও দেন তারা।

তিন মাস আগে ঘটেছিল এ ঘটনা। জড়িত দুই যুবকের একজন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানা সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি, আরেকজন কিশোর গ্যাং ‘লাড়া দে’র প্রধান মারুফ—চিনে ফেলেন আহমেদ খান। এতদিন আতঙ্কে চুপ ছিলেন তিনি। তবে রাব্বি গ্রেপ্তার ও মারুফ আত্মগোপনে গেলে মুখ খোলেন।

ঘটনায় যুক্ত ছিলেন এএসআই জালালও। ঘটনার আগে ধানমন্ডিতে এক প্রকাশকের বাড়িতে মব ঘটনার দায়ে মে মাসেই রাব্বিকে থানা সমন্বয়কের পদ থেকে বহিষ্কার করেছিল ছাত্র সংগঠনটি।

ভয়াবহ সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে শিউরে ওঠেন আহমেদ খান। বলেন, ‘সেদিন টোকিও স্কয়ার থেকে তুলে ৪০ ফিটে নিয়ে যায়। এএসআই জালাল বলেন, তোকে কেমনে বাঁচাব? ফোন কেড়ে নেয়, কল এলেও রিসিভ করতে পারছিলাম না। এক ফাঁকে মামার ফোন রিসিভ করে বলি, জালাল দারোগা বছিলায় এনেছে। পরে মামা ফোন দিলে আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওসির মধ্যস্থতায় ছেড়ে দেয়, বলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’

পুলিশের পক্ষ থেকে হুমকি আসে কাউকে কিছু না বলতে। আহমেদ বলেন, ‘রাব্বি ও আরেকজনকে চিনেছিলাম। তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে টাকা আদায় করতে চেয়েছিল। বারবার বোঝাচ্ছিল টাকা না দিলে ক্রসফায়ার।’

রাব্বি বর্তমানে রিমান্ড শেষে কারাবন্দি, মারুফ পলাতক। তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এএসআই জালাল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন। জানান, সেদিন ৩০-৪০ জন মোবাইল চোর বলে একজনকে ঘিরে রেখেছিল। তিনি ছেলেটিকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেন। বলেন, ‘গুলির ভয় দেখাইনি। সে তো অপরাধী না। সমন্বয়ক রাব্বিই মব করেছিল, সে খারাপ ছেলে।’

রোববার সেফ হাসপাতালে চাঁদাবাজির অভিযোগে রাব্বি ও এনসিপির মোহাম্মদপুর থানা কমিটির তিন যুগ্ম সমন্বয়ক গ্রেপ্তার হন। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আসে। স্থানীয়রা জানান, অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনের মাঠে না থাকলেও পরে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন রাব্বি। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে গড়ে তোলেন অপরাধ বলয়—চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাস, জমি ও ফ্ল্যাট দখল, কমিশন বাণিজ্য। এসব কাজে ব্যবহার করতেন ছাত্রলীগ নেতা মারুফের কিশোর গ্যাং ‘লাড়া দে’কে।

তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নাজমুল আলম শেখ বলেন, ‘রিমান্ডে সেফ হাসপাতালের ঘটনায় আসামিরা প্রথমে এক লাখ টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছে।’ এ ছাড়া আরও নানা অভিযোগ যাচাই করা হচ্ছে।

রাব্বি কমিশন নিয়ে জমি বিক্রিরও চাপ দিতেন। আগারগাঁওয়ের রিমন ওয়াহিদের পারিবারিক জমি দখলের চেষ্টা করে এক চক্র। ‘ত্রাতা’ হিসেবে ফোন দেন রাব্বি ও সহযোগী আরিফ। বলেন, জমি বিক্রি করলেই সমস্যার সমাধান। রাজি না হলে হয়রানি শুরু হয়। রিমন বলেন, ‘তারা চাচ্ছিল জমি বিক্রি করিয়ে কমিশন খাবে। রাজি না হওয়ায় এখন আরও ঝামেলা করছে।’

রাব্বির শক্তির উৎস ছিল ‘লাড়া দে’ গ্যাং। গত মে মাসে ধানমন্ডিতে এক প্রকাশকের বাড়িতে মব সৃষ্টি করে রাব্বির নেতৃত্বে। ওই ঘটনায় ধরা পড়েন তিনি ও আরও দুজন। পরে এনসিপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা থানায় গিয়ে ছাড়িয়ে নেন তাদের। মব সৃষ্টিকারীদের অধিকাংশই ছিল মারুফের সরবরাহ করা গ্যাং সদস্য।

রাব্বি ও মারুফের একাধিক ছবি এবং ভিডিও এসেছে কালবেলার হাতে। একটিতে দেখা যায়, বাংলামটরের শাকুরা রেস্তোরাঁয় এনসিপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গ্যাং সদস্যদের বৈঠক চলছে।

জাফরাবাদ এলাকার পাবনা গলি হাউসের একটি বাসায় থাকতেন রাব্বি। ধানমন্ডির ঘটনার পর আর বাসায় ফেরেননি। সেখানে থাকা আত্মীয়রাও আর নেই। বাসার দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুমি আক্তার বলেন, ‘ধানমন্ডির ঘটনার পর সে আসেনি। তবে তাকে এলাকায় মাঝে মাঝে দেখা গেছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পবিত্র কোরআন অবমাননার বিচারের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ব্লাড সুগার বাড়ানো থেকে রক্ষা পেতে বাদ দিন সকালের ৪ খাবার

আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, চার ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে

শেখ হাসিনার বিষয়ে দুই দেশকে কী করতে হবে, জানালেন বিক্রম মিশ্রি

দাফনের ১৯ দিন পর স্কুলছাত্রীর লাশ উত্তোলন

ভালোবাসার শিখরে থেকেই বিদায় নিতে চান তাহসান

ছাত্রদলে যোগ দিলেন বৈষম্যবিরোধীর পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী

বিচ্ছেদের পথে থাকে যেসব ছোট ছোট কারণ

দেশের জন্য উৎসর্গ প্রাণ, বাবার দেখা হলো না সন্তানের মুখ

সব দল একমত হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া সম্ভব : গোলাম পরওয়ার

১০

ডা. আজিজুর রহমান মারা গেছেন

১১

নির্বাচনী জোটে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

১২

তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রশংসায় শিশির মনির

১৩

বিসিবি নির্বাচন / ভোট গণনার সময় যে বার্তা দিলেন তামিম

১৪

ব্রহ্মপুত্র নদে ভেসে আসছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি

১৫

গবেষণা / ঘুম না হলে সহজ ব্যায়ামে মিলতে পারে সমাধান

১৬

ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

১৭

বিসিবি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

১৮

স্রোতের মধ্যে জীবন বাজি রেখে বাঁধ রক্ষা, মহাবিপর্যয় এড়াল বিজিবি

১৯

রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

২০
X