জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২৪ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্বাচনী কেনাকাটায় ব্যস্ত ইসি

নির্বাচনী কেনাকাটায় ব্যস্ত ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এসব কেনাকাটা শেষ করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচনী উপকরণও সংগ্রহ শুরু করেছে সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী কাজের জন্য প্রায় ১১ ধরনের নির্বাচনী সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, লাল গালা, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালির কলম, গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ (বড়), হেসিয়ান ব্যাগ (ছোট) ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক রয়েছে। এরই মধ্যে ব্যালট বাক্স, বাক্সের ঢাকনা, বিভিন্ন ধরনের সিল, কালি ও ব্যাগ কেনার দরপত্র হয়ে গেছে। এবার ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই কিনছে ইসি, যা আগে বিদেশ থেকে আনা হতো। সেক্ষেত্রে ১ লাখ ৬১ হাজার রিম বা ৩২ লাখ ২০ হাজার দিস্তা কাগজ কেনার প্রক্রিয়াও হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কাগজ দিয়ে তৈরি হবে ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ধরনের খাম ও প্যাড। নির্বাচনের জন্য মোট ৮০ হাজার ব্যালট বাক্স কেনা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে ৪০ হাজার ও অক্টোবরে ৪০ হাজার ইসির হাতে পৌঁছবে। এগুলো সঙ্গে সঙ্গেই মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়া গানি ব্যাগ ৯০ হাজার, হেসিয়ান ব্যাগ ১ লাখ ৬৫ হাজার, মার্কিং সিল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার, অফিসিয়াল সিল ৭ লাখ ১৫ হাজার, ব্রাশ সিল ১ লাখ, গালা ২০ হাজার কেজি, অমোচনীয় কালি ও কলম ৮ লাখ ১৫ হাজার, ব্যালট বাক্সের প্লাস্টিকের লক ৪০ লাখ ও ব্যালট বাক্সের ৫৫ হাজার ঢাকনা কেনা হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। এবার কাগজসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় দ্বিগুণ হতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স, নির্বাচনী সামগ্রী, প্রশিক্ষণ, পরিবহন, জ্বালানিসহ নির্বাচন পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০টি খাত থাকবে; যেগুলোয় এ টাকা ব্যয় হবে। তবে এর বড় একটি অংশ ব্যয় হবে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

সূত্র জানায়, ব্যালট পেপার ছাড়াই নির্বাচনী মালপত্র ক্রয়ে ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৫ টাকা লাগবে। আর প্যাডের জন্য লাগবে আরও ৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ কোটি টাকার নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। এসবের সঙ্গে আরও যোগ হবে বিজি প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানোর খরচ, লেবাররা যদি অতিরিক্ত সময় কাজ করে সেই পেমেন্ট এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ভাতা। বিজি প্রেস এরই মধ্যে কাগজ কেনার জন্য ৩৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডারও দিয়েছে। এতে ১ লাখ ৬১ হাজার রিম কাগজ কেনা হবে।

এদিকে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প প্যাড কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে কমিশন। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে এসব প্রতিষ্ঠানের গড়িমসির কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের জামানত এরই মধ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হওয়া ১৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে চলে যাবে। আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের নমুনা বিএসটিআইর মান যাচাই পরীক্ষায় অযোগ্য হয়েছে। এর আগে আরও আটটি প্রতিষ্ঠান নমুনা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল।

ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের জন্য ৮ লাখ ১৫ হাজার পিস স্ট্যাম্প প্যাড প্রয়োজন। ইসির চাহিদা বা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যার প্রতিটির বাজারদর ৬৯ টাকা। কিন্তু কিছু কিছু দরদাতা প্রতিষ্ঠান বাস্তব দাম যাচাই না করেই কাজটি পেতে সর্বনিম্ন দাম দরপত্রে উল্লেখ করে টেন্ডার ড্রপ করে। দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ার পর সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পেয়ে গেলেও যখন পণ্য সরবরাহের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বাহানায় পাশ কাটিয়ে চলে। সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান ইসিকে প্রতিটি স্ট্যাম্প প্যাড সরবরাহের জন্য মাত্র ২৫ টাকা মূল্য দিয়ে নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় তাদের চুক্তির জামানত রাখা ১৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

একই ভাবে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান এই স্ট্যাম্প প্যাড সরবরাহে আগ্রহী হলে তাদের আগাম নমুনা পাঠাতে ইসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া নমুনা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটে (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অযোগ্য হয়। ফলে স্ট্যাম্প প্যাডের বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনী উপকরণ হাতে পাওয়া শুরু করেছি। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে সব উপকরণ পৌঁছে যাবে। এরই মধ্যে কাগজ কেনার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তারাই সব ব্যালট পেপার ছাপাতে সক্ষম। সব ব্যালট পেপার আমরা বিজি প্রেস থেকে ছাপাব। ৩৩ কোটি টাকার একটা টেন্ডার তারা করেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে অন্য কোনো ব্যয় যদি সামনে আসে তা বাড়তে পারে।

সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। এর আগে নভেম্বরে ঘোষণা হবে তপশিল। সেই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে ইসি। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ নির্ধারণ, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা কার্যক্রম শেষ করেছে সংস্থাটি। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোট কক্ষ রয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে ১০-১২ লাখের মতো জনবল বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, অ্যাসিড নিক্ষেপে নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৩

রাস্তার পাশে পড়ে ছিল ২ যুবকের লাশ

অস্ত্র নিয়ে পালাচ্ছিলেন ছাত্রদলের ২ নেতা, অতঃপর...

ইসরাইলের পিআর পদ্ধতি কেন আলেমদের আদর্শ, বুঝে আসে না : প্রিন্স

নিজ বাসভবনে মহররম অনুষ্ঠানেও অনুপস্থিত আয়াতুল্লাহ খামেনি

ইরান থেকে ফেরার পথে গাজায় বোমা ফেলত ইসরায়েলি বিমান

ভিআইপি রুম না পেয়ে হোটেলে ভাঙচুর করেন যুবদল নেতা মনির

কানাডার একাধিক বিমানবন্দরে বোমা হামলার হুমকি

জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা মব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ

বনানীতে হোটেলে নারীকে মারধর, যুবদল নেতা মনির বহিষ্কার

১০

খতমে নবুওয়াতের বিবৃতি / উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদের বক্তব্য মানহানিকর

১১

বনানীতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে হোটেলে হামলা, গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান

১২

আ.লীগকে পরবর্তী প্রজন্ম চিনবেই না : রেজা কিবরিয়া

১৩

জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে দেশজুড়ে আইডিয়া প্রতিযোগিতা

১৪

ইডেন কলেজ সাংবাদিক সমিতির কার্যক্রম স্থগিত

১৫

ব্যাটারি চুরির অভিযোগে যুবদল কর্মী গ্রেপ্তার

১৬

বিড়াল ধরতে গিয়ে ১০ তলা থেকে পড়ে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৭

বিসিএস ক্যাডারে স্থান পেলেন রাবির প্রায় ৬০ শিক্ষার্থী

১৮

আদালতে দুর্জয়কে ডিম নিক্ষেপ

১৯

ইসরায়েলের আবারও ড্রোন হামলা

২০
X