চীনের বেইজিং সফরে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। মার্কিন মুলুকে তার প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প নিয়ে লিখেছেন সাব্বিন হাসান-
চীনের বেইজিং সফরে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, তার বেইজিং সফর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরী সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে। চার দিনের সফর শেষে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সরাসরি ও অর্থবহ আলোচনা হয়েছে তার। চীন ছাড়ার আগে ইয়েলেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক। একই সঙ্গে ইয়েলেন আত্মবিশ্বাসী, তার সফর যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ককে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে খুব বেশি হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনে অর্থমন্ত্রী হয়ে তুমুল আলোচনায় আসেন সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান জ্যানেট ইয়েলেন। সর্বশেষ সিনেটের ভোটে অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইয়েলেন।
ইয়েলেন নামেই খ্যাতি। পুরো নাম জ্যানেট ইয়েলেন। জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৩ আগস্ট। নিউইয়র্ক শহরে কেটেছে শৈশব। বাবা জুলিয়াস ইয়েলেন চিকিৎসক। মা অ্যানা রুথ শিক্ষক। কিন্তু ইয়েলেন প্রেমে পড়েন অর্থনীতির। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন অর্থনীতিতে। সরকারি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকতা।
১৯৭৭ সালে প্রথম চাকরি শুরু করেন ফেডারেল রিজার্ভে। সহকর্মী হিসেবে জর্জ আকেরলফের সঙ্গে পরিচয় সেখানেই। হয় ভালোবাসার সম্পর্ক। বিয়ে করেন দ্রুতই। দু’জনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন শিক্ষকতা পেশায়। সফল এ দম্পতির একমাত্র ছেলে রবার্ট আকেরলফ। রবার্ট নিজেও অর্থনীতির অধ্যাপক।
স্বামী জর্জ আকেরলফ ২০০১ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেন। করপোরেট অর্থনীতির দুনিয়ায় ইয়েলেন আলোচিত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে মেধাবী অর্থনীতি জিনিয়াসদের মধ্যে অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সহ-সভাপতি হিসেবে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী ব্যাংকার হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন ইয়েলেন।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের সর্বোচ্চ শিল্পোন্নত সাতটি দেশের (আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, কানাডা, ব্রিটেন এবং ইতালি) কোথাও কখনও শীর্ষ ব্যাংকের কর্ণধার হিসেবে কোনো নারী দায়িত্ব পাওয়ার নজির ছিল না ইয়েলেনের আগে।
ইয়েলেন ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল অবধি যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শীর্ষ অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০৭ সালের আর্থিক সংকটের পরে অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে ওঠার কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয়। মার্কিন অর্থনীতিতে ইয়েলেন কাজ করেছেন সুদীর্ঘ সময়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন। মার্কিন ফেড সভাপতি হওয়ার আগে সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা বিশ্বের অর্থ বাজারের প্রভাবশালী নারী হিসেবে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, আইএমএফের চেয়ারম্যান ক্রিস্টিন লাগার্দের পাশেই সমগুরুত্ব দেন ইয়েলেনকে।
দেশটির বেকারত্ব এখন কোটির সংখ্যা ছাড়িয়েছে। ইয়েলেন অবশ্য বরাবরই কর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তার এ নীতিই তাকে জনপ্রিয় করে। সুদের হার বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ইয়েলেন কাজ করেন কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টিতে। বর্তমানে সুদের হার একেবারে কমিয়ে অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে এবং বৈষম্য কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাইডেন’র ভরসা এখন অভিজ্ঞ ইয়েলেন।
অর্থনীতির দুষ্ট চক্রের সঙ্গে লড়াই করতে ইয়েলেন বেকারত্বের হার কমিয়ে আনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে উৎপাদন বাড়ানো এবং চাকরির বাজার তৈরিই ইয়েলেন ম্যাজিকের মূলমন্ত্র। কঠিন বাজার অর্থনীতিতে টিকে থাকার দক্ষ ভাবনাগুলোর কারণেই ইয়েলেন বিশ্ব ব্যাংকিং মঞ্চে এতটা আলোচিত। নিজেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলে স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান কখনই বিপরীত হয় না বলে বিশ্বাস করেন ইয়েলেন।
মন্তব্য করুন