কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উচ্চশিক্ষায় খালেদা জিয়ার নীরব বিপ্লব

ড. মো. আবুল কালাম সরকার
ড. মো. আবুল কালাম সরকার। ছবি : সংগৃহীত
ড. মো. আবুল কালাম সরকার। ছবি : সংগৃহীত

আজ যখন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নানা সংকট, মানের প্রশ্ন, রাজনৈতিক প্রভাব ও গবেষণার দুর্বলতা দেখা যায়, তখন ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে স্পষ্ট হয়—খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, তা আজও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল স্তম্ভ হয়ে আছে। তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক; যিনি শিক্ষাকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। তার জন্মদিনে, যখন আমরা তার রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম স্মরণ করি তখন উচ্চশিক্ষা বিস্তারে তার অবদানও স্মরণ করতে হয়

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়া শুধু একটি নাম নয়—তিনি একটি অধ্যায়, একটি সংগ্রামের প্রতীক। তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই নয় বরং এক আপসহীন নেত্রী, যিনি প্রতিকূল সময়েও গণতন্ত্রের পতাকা হাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) হাল ধরেন, যখন দলটি ছিল চরম সংকটে। তার দৃঢ়তা, সাহস এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বিএনপি নতুন প্রাণ পায়।

দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ এবং জাতীয় উন্নয়নের পথে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পরিধি যেমন বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, একজন মা হিসেবে এবং একজন সংগ্রামী নারীর প্রতীক হিসেবে।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাসে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব বরাবরই গভীর। নীতিনির্ধারণ, প্রতিষ্ঠান গঠন, বাজেট বরাদ্দ কিংবা শিক্ষার মানোন্নয়ন সবক্ষেত্রেই তার দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে শিক্ষার গতিপথ। এ প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের যে ধারা সূচিত হয়েছিল, তা নিঃসন্দেহে এক নীরব বিপ্লবের প্রতিধ্বনি।

১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ছিল নগরকেন্দ্রিক ও সীমিত। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চশিক্ষা ছিল প্রায় অধরা। এ বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে তার সরকার উচ্চশিক্ষা বিস্তারে একটি সুস্পষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ করে। তার প্রথম মেয়াদেই প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; যা দেশের বিভিন্ন কলেজকে একাডেমিকভাবে সংযুক্ত করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চশিক্ষাকে একটি কেন্দ্রীয় কাঠামোতে নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়; যা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করে গবেষণা তহবিল, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো হয়। গবেষণায় অনুদান বৃদ্ধির ফলে শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ বাড়ে এবং শিক্ষার মান উন্নত হয়। ১৯৯২ সালে তার সরকারের সময় প্রণীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এ আইনের ফলে বেসরকারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা উচ্চশিক্ষাকে আরও গণমুখী ও বহুমাত্রিক করে তোলে। যদিও পরবর্তীকালে মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়, তবুও এ পদক্ষেপ উচ্চশিক্ষার বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

আজ যখন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নানা সংকট, মানের প্রশ্ন, রাজনৈতিক প্রভাব ও গবেষণার দুর্বলতা দেখা যায়, তখন ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে স্পষ্ট হয়—খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, তা আজও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল স্তম্ভ হয়ে আছে। তিনি শুধু একজন রাজনীতিক নন, ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক; যিনি শিক্ষাকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। তার জন্মদিনে, যখন আমরা তার রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম স্মরণ করি, তখন উচ্চশিক্ষা বিস্তারে তার অবদানও স্মরণ করতে হয়। কারণ, একটি জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। খালেদা জিয়ার দূরদৃষ্টির ফলে তার হাত ধরেই বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ভিত রচিত হয়।

লেখক: অধ্যাপক, সাবেক চেয়ারম্যান

পার্সিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ

হরিণের মাংসসহ আটক ৮

যে বিলাসবহুল নেশায় বছরে ৬০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেন হলান্ড

পাটুরিয়ায় ফেরিঘাটে ভাঙন, ৪ নম্বর ঘাটও ঝুঁকিতে

দুই কারণে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

ত্বকের যত্নে ম্যাজিকের মতো কাজ করে যে ৫ ফল

আপনি কি জানেন, কেন তালার নীচে ছোট্ট ছিদ্র থাকে?

বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর জর্জিনাকে কত টাকার উপহার দিয়েছেন রোনালদো?

ফ্রিজে রাখা কাটা পেঁয়াজ কি খাওয়া উচিত, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

লুট হওয়া পাথর বালু ও মাটি দিয়ে আড়ালের চেষ্টা

১০

যেসব দেশে থাকার জন্য টাকা পাওয়া যায়

১১

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এখন কত

১২

ডিএমপিতে অনলাইন জিডি করবেন যেভাবে

১৩

৪ জনের মরদেহ উদ্ধার / ‘আমরা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভালো’ লেখা চিরকুটে আরও যা ছিল

১৪

ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন 

১৫

পানিবন্দি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খিচুড়ি পৌঁছে দিলেন ইউএনও

১৬

১০৭ বছর বয়সেও চশমা ছাড়া কোরআন পড়েন নুর জাহান

১৭

প্রেম, স্মৃতি আর বিদায়ের গল্পে লিসা-কেনতারো

১৮

গোপালগঞ্জে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালিত

১৯

আমিরের সঙ্গে দিব্যর স্বপ্নময় মুহূর্ত

২০
X