ড. সেলিম জাহান
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনৈতিক সামষ্টিকতার সীমানা পেরিয়ে

অর্থনৈতিক সামষ্টিকতার সীমানা পেরিয়ে

বর্তমান সময়ে অর্থনীতি বিষয়ে সামষ্টিকতা বিষয়টি বড় বেশি গুরুত্ব পায়। তা সেটা বৈশ্বিক প্রেক্ষিতেই হোক, কিংবা দেশজ প্রেক্ষাপটেই হোক। বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক আলোচনার একটা বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বজুড়ে পাল্টা শুল্কের বিষয়টি এবং তার সামষ্টিক প্রভাব বিশ্ব-বাণিজ‍্যে কিংবা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথতা, অথবা নানান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোটের করণীয় বিষয়গুলো। পেছনে পড়ে যাচ্ছে কর্মহীনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার কাহিনি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ এবং বুভুক্ষার বিস্তৃতি, অর্থনৈতিক সুযোগের আশায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে

অভিবাসনকালে অসংখ‍্য মানুষের জলসমাধি।

বাংলাদেশ দেশজ অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতও এর ব‍্যত্যয় নয়। সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়টি আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক আলোচনা ও ঘটনাপ্রবাহের বিরাট অংশজুড়ে আছে। সে আলোচনা ও ঘটনাপ্রবাহ তুঙ্গে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে। আলোচনা চলছে পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষত পোশাক শিল্পের ওপর কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। সেইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে প্রচুর প্রতিবেদন বেরোচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অর্থপ্রবাহ বিষয়ে, বাণিজ্য ভারসাম্য নিয়ে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের ঋণের কিস্তির ওপরে।

এখন আলোচনায় আছে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ও তার সময়কাল—আগামী বছর, না ২০৩২। অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও দেশের অগ্রগণ‍্য ব‍্যবসায়ী মহল এসব বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরাও পিছিয়ে নেই। আগামী বছরে আমাদের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি বিষয়েও তাদের প্রাক্কলন সম্পর্কে তারা আমাদের অবহিত করছেন।

দেশের অর্থনৈতিক ঘটনাপ্রবাহও ঘটছে অতি দ্রুত। বিনিয়োগ বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে, তরুণ উদ‍্যোক্তাদের নব্যোদ্ভাব্য উদ্যোগ নিয়েও নানান কথাবার্তা হচ্ছে। অনুষ্ঠান হচ্ছে খেলাপি ঋণ নিয়ে, ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের ওপরে, বেসরকারি খাতের বিষয়াবলি নিয়ে। অর্থনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর আলোচনা সভা হচ্ছে, বসছে গোলটেবিল বৈঠকও।

এসব থেকে এটা খুব স্পষ্ট যে, আলোচনা এবং ঘটনাপ্রবাহের যে জোয়ার আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা অর্থনীতির সামষ্টিক পর্যায়ে। সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত, বাণিজ্য ঘাটতি, বিদেশি বিনিয়োগের মতো খটোমটো বিষয় আছে, আছে সুচিহ্নিত উপাত্ত এবং সংখ্যা। সন্দেহ নেই, অর্থনীতির সামষ্টিক পর্যায়ে প্রবণতা, গতি-প্রবাহ, অর্জন এবং অন্তরায় বোঝার জন্য এগুলো নিতান্তই প্রয়োজন। এগুলো দরকার নীতিমালা প্রয়োজনের জন্য, সম্পদ প্রবাহের জন্য, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্যও।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এগুলোর পেছনে মানুষের কথা কোথায়? মানুষের যাপিত জীবনের ওপরে প্রভাব-চিত্র কোথায়? দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সামগ্রিক এসব ধারণা, উপাত্ত ও সংখ্যা দিয়ে কি অর্থনীতির ব্যষ্টিক স্তরের বাস্তবতা বোঝা যায়? সামষ্টিক অর্থনৈতিক কি সেই বঞ্চনার কথা বলে, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের ৮৮ শতাংশ দুবেলা ভাত খেতে পারে না। তারা একবেলা পাউরুটি কিংবা বিস্কুট খেয়ে কাটিয়ে দেয়। কিংবা যে ২৭ লাখ মানুষ অর্থনীতিতে কর্মহীন, তাদের সংসার কী করে চলে? অথবা যে ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়তে পারে, তাদের দিন কী করে চলবে? না, সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এসব কিছুই বলে না। সামষ্টিক অবস্থার সঙ্গে ব্যষ্টিক অবস্থার একটি বিচ্ছিন্নতা আছে। সামষ্টিক ছবি আর ব্যষ্টিক প্রতিচ্ছবির মধ্যে ভিন্নতা আছে।

এই যেমন, সামষ্টিক বিশ্লেষণ বলেছে যে খাদ্য মূল‍্যস্ফীতি কমেছে; কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ বিশ্লেষণ আমাকে মাঠপর্যায়ের নানান বাস্তবতা, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে, সে সম্পর্কে কিছুই বলছে না। ধানের ফলন ভালো, চাল আমদানিও হচ্ছে প্রচুর, খোলা বাজারেও চাল বিক্রি করছে সরকার, কিন্তু চালের দাম তেমনটা কমছে না সাধারণ মানুষের কাছে। কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে তার খাদ্য গ্রহণে, বিঘ্নিত হচ্ছে তার পুষ্টি। মাঠপর্যায়ে আমরা কি জানি, কারওয়ান বাজারে কোন পণ্যটির মূল্য নির্ধারিত হয়, শেরপুর বাজার কোন সবজিটির মূল্য বেঁধে দেয়?

শ্রমবাজার, বেকারত্ব বিষয়ে সামষ্টিক পর্যায়ে অনেক তথ্য-উপাত্ত লভ্য। সেসব সংখ্যা থেকে আমরা বলি, বহু মানুষ কর্মহীন। অথচ, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরাট অভিযোগ যে, ক্ষেতে-খামারে কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তিন বেলা খাবার, চা-নাশতার সঙ্গে আর্থিক মজুরিসহ কৃষিকাজে শ্রম নিয়োগে খরচ পড়ে যায় হাজার-বারোশ টাকার মতো। তবু লোক নেই। সুতরাং সামষ্টিক তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে ব্যষ্টিক বাস্তবতার ফারাক অনেক।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ আসে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থ থেকে। এই আয় বর্তমানে ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সামষ্টিক এই সাফল‍্যের পেছনের ব্যষ্টিক আত্মত‍্যাগের কথা কি আমরা জানি? ২০১৫ থেকে ২০২২, এই সাত বছরে, প্রত্যেক বছরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃতদেহ দেশে এসে পৌঁছেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিলেন। সত্যিকার অর্থে, গত ১০ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু দ্বিগুণ হয়ে গেছে এবং এই সময়কালের মধ্যেই মোট ৩৮ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃতদেহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এ প্রেক্ষাপটে যে প্রশ্নটি ক্রমান্বয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তা হলো ‘বাংলাদেশ কি জীবনের বিনিময়ে অর্থের পেছনে ছুটবে?’

আসলে, সামষ্টিক অর্থনীতির আলাপ-আলোচনা, ঘটনাপ্রবাহ ব্যষ্টিক পর্যায়ের এসব তথ্য দেয় না, এসব বাস্তবতাকে ঢেকে রাখে। ফলে সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের ওপরের অর্থনীতির বাস্তব প্রভাব আমরা জানতে পারি না। আমরা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে উন্নয়ন তো মানুষেরই জন্য—মানুষই তো উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। অতএব, সামষ্টিক চালচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ব্যষ্টিক পর্যায়ে মানুষের জীবন-বাস্তবতাকে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চয়ই নিশ্চিত করতে হবে; কিন্তু তা যেন সাধারণ মানুষের জীবনকে অস্থিতিশীল না করে।

দ্বিতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা কিংবা অর্থনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ চালচিত্রে

পরিমাণগত দিকটিই প্রাধান্য পাচ্ছে। বারবার উল্লেখিত হচ্ছে সামষ্টিকভাবে কত বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ এ দেশে আসতে পারে, কিংবা স্বাস্থ্য খাতে বিদেশিরা কত কোটি টাকার সাহায্য দেবে, অথবা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপে কত বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাংলাদেশ হারাবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এসব বিষয়ের পরিমাণগত মাত্রিকতা গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই; কিন্তু ব্যষ্টিক পর্যায়েও সেসবের গুণগত দিকের প্রতি নজর দেওয়া দরকার।

যেমন, বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণই বড় কথা নয়, দেখতে হবে সে সব বিনিয়োজিত উদ্যোগ কি পরিবেশের ক্ষতি করবে, যেখানে কৃষকের ক্ষতি হবে, নানান গোষ্ঠী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে, প্লাবনের সম্ভাবনায় মানুষের জান-মালের ক্ষতি হতে পারে, কিংবা প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার উপকরণ ব্যাহত হতে পারে। সেসব বিনিয়োজিত উদ্যোগে কি স্বয়ংক্রিয়করণ এমন হবে, যাতে সাধারণ কর্মনিয়োজন হ্রাস পাবে? বিদেশি রাষ্ট্র যখন স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ সহায়তা দেবে তা কি গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক মা-শিশু সেবাকেন্দ্রের জন্য ব্যয়িত হবে, নাকি নগর অঞ্চলের উচ্চতর সেবায় নজর দেবে? বিপুল অর্থ পরিমাণের এসব বিনিয়োগে নারীর সুযোগ-সুবিধা, যেমন—কর্মনিয়োজন, সেবা প্রাপ্তিতে নারীর অভিগম্যতা কতখানি থাকবে? ব্যষ্টিক পর্যায়ে বিনিয়োগের গুণগত দিক নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে জনগণের অংশগ্রহণ কতখানি থাকবে, তাদের কণ্ঠস্বরের প্রতি কতখানি মর্যাদা দেওয়া হবে, তারা সেসব ব্যাপারে কি অংশীদারত্ব অনুভব করবেন?

সুতরাং সামষ্টিক অর্থনীতির পরিমাণগত দিকের সঙ্গে ব্যষ্টিক গুণগত বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। তা না হলে মানবকুশলশূন্য ভৌত বিষয়ের পরিমাণগত বিস্তারকেই উন্নয়ন বলা হবে, ভ্রান্ত স্থানে বা বিষয়ে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যে কোনো অগ্রগতিই আখ্যায়িত হবে উন্নয়ন বলে। বিনিয়োজিত উদ্যোগের কর্মকাণ্ডের দৃশ্যমানতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তাদের কণ্ঠস্বরের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। সেসব বিনিয়োগের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণে তাদের মতামত অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

সামষ্টিক পর্যায়ে পরিমাণগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যষ্টিক পর্যায়ে একটি বিশেষ গুণগত বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সেটি হচ্ছে সাম্য এবং সমতা। কোন কোন বিষয়ে সমতা অনুসৃত হতে হবে—যেমন, রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা, আইনের চোখে সমতা; কোন কোন ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বেশি উঠে আসবে—যেমন, সেবার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাম্য, কর প্রদানের ক্ষেত্রে সাম্য। কোনো রকমের বৈষম্যই গ্রহণযোগ্য নয়। বৈষম্য হতে পারবে না নারী-পুরুষে, অঞ্চলে-অঞ্চলে, বিভিন্ন আর্থসামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে।

সামষ্টিক পর্যায়ে শুধু পরিমাণগত প্রসারেই মনোসংযোগ করলে পরিমাণগত অগ্রগতি হয়তো হয়; কিন্তু ব্যষ্টিক স্তরে উন্নয়ন হয় না। কারণ, অগ্রগতি হচ্ছে যে কোনো ইতিবাচক বিষয়ের প্রসার—যেমন, জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি; কিংবা নেতিবাচক কোনো বিষয়ের হ্রাস, যেমন, শিশুমৃত্যু হারের হ্রাস। উন্নয়ন হচ্ছে সামষ্টিক পরিমাণগত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যষ্টিক পর্যায়ে গুণগত পরিবর্তন। জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি অগ্রগতি, তার সুষম বণ্টন হলে সেটা উন্নয়ন—কারণ, সেখানে একটি গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।

তৃতীয়ত, আমরা সামষ্টিক অর্থনীতির পরিমাণগত আর্থিক দিকটির দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে নয়। সামষ্টিক পর্যায়ের পরিমাণগত অর্থ বা সম্পদকে যদি ব্যষ্টিক পর্যায়ে মানুষের জীবনকুশলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে হয়, তাহলে অর্থের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মানব উন্নয়নের জন্যে রাষ্ট্রের নানান প্রতিষ্ঠানের কাঠামোকে হতে হবে দক্ষ, সমতামুখী এবং কার্যকর। ব্যষ্টিক পর্যায়ে মানুষের জীবনকুশলমুখী সেবা দিতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা অপরিহার্য। অদক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে লক্ষ্যের বিচ্যুতি ঘটে, দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে এবং কায়েমি স্বার্থ গেড়ে বসে। তখন সামষ্টিক স্তর থেকে পরিমাণগত অর্থ যতই ব্যষ্টিক পর্যায়ে আসুক না কেন, তা কখনো জনহিতে ব্যয়িত হয় না।

ব্যষ্টিক পর্যায়ে জনকল্যাণে কাজ করতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোকে কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং মূল্যবোধ ধারণ এবং অনুসরণ করতেই হবে। যেমন, মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সাম্য, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ। এগুলো ব্যতীত বজায়যোগ্য মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন হয় না। সেইসঙ্গে প্রয়োজন হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত এবং যূথবদ্ধ অঙ্গীকারে, নিঃস্বার্থবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির ও মানসিকতা পরিবর্তনের। কষ্টকর প্রক্রিয়া সন্দেহ নেই; কিন্তু অসম্ভব নয়।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করতে হলে একটি দৃশ্যমানতা ও দায়বদ্ধতার কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ দৃশ্যমানতার একটি বিরাট স্তম্ভ হবে দৃশ্যমান এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত। এসব তথ্য-উপাত্তকে বিবেচনা করতে হবে জনগণের সম্পদ হিসেবে। দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানের অন্যতম মাত্রিকতা। দায়বদ্ধতার মানে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানিক বিধিবদ্ধ নিয়ম, শৃঙ্খলা এবং অনুশাসন মেনে তার কর্তব্য পালন করবেন। তার প্রতিটি কাজের জন্য তিনি দায়ী থাকবেন এবং তিনি জবাবদিহি করবেন। দৃশ্যমানতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণের একটি অন্যতম পন্থা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবীক্ষণ, নিরীক্ষণ এবং মূল্যায়ন।

বাংলাদেশ আজ এক নতুন সমাজ বিনির্মাণে প্রয়াসী। এ বিনির্মাণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক তো নয়ই। এ বিনির্মাণ শুধু পরিমাণগত নয়। এ বিনির্মাণ সামাজিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক। এ বিনির্মাণ শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগতও, শুধু অর্থের নয়, প্রতিষ্ঠানেরও। সংস্কারের কথা তাই বড় প্রাসঙ্গিক—কিন্তু তা যেন সামষ্টিকতার সীমানা পেরিয়ে ব্যষ্টিক পর্যায়েও সংগঠিত হয়।

ড. সেলিম জাহান

অর্থনীতিবিদ; ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্যদূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান নিয়ে যা বললেন সালাহউদ্দিন

আগুন নেভাতে ২৬ ঘণ্টা, কারণ জানাল ফায়ার সার্ভিস

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিককে মারধর, মোবাইল ভাঙচুর

কখন চিয়া সিড খেলে সবেচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়?

চাকসুর ভিপি-জিএস-এজিএস কার বাড়ি কোথায়

শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে : ফারুক

ভক্তদের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেছে আর্টসেল

খুলনা কারাগারে সংঘর্ষে তিন আসামিকে কাশিমপুরে

কুবির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন

১০

রাজশাহীতে ব্যবসায়িক পার্টনারের বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ

১১

নাশকতার পরিকল্পনা, আ.লীগের ৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

১২

ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে মারামারি-কাটাকাটি কিছুই থাকবে না : ফয়জুল করীম

১৩

কোরআন পাঠে শ্রেষ্ঠদের হাতে ওমরাহসহ ১৫ লাখ টাকার পুরস্কার দিল আস-সুন্নাহ

১৪

দুবার গাজা ধ্বংস হতে দেখা বৃদ্ধ আয়িসের করুণ গল্প

১৫

ইউরোপ যেতে সাঁতরে সাগর পাড়ি দিলেন মা ও ১০ বছরের সন্তান

১৬

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে জয়

১৭

বিভাজনের রাজনীতি করে দেশকে ভালোবাসা যায় না : ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

১৮

যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণের ঐক্যের সামনে ভেসে যাবে : ডা. জাহিদ

১৯

দেশে একাধিক অগ্নিকাণ্ড, সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক

২০
X