দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে বহুল আলোচিত সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনরচিত ও বিশ্বের মানচিত্রে নতুন বাংলাদেশের রূপকারের অমসৃণ পথের সংগ্রাম চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে মুজিব বায়োপিক সিনেমাটিতে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য তুলে ধরে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাচ্ছে আজ শুক্রবার।
একযোগে সারা দেশে দুই শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে সিনেমাটি। প্রথম দিনের প্রথম শোর অগ্রিম টিকিটও ইতোমধ্য বিক্রি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতার জীবনীভিত্তিক নির্মিত চলচ্চিত্রটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। ঐতিহাসিক এই সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হবে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ পরিবারের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটির কিছু কিছু আবেগঘন দৃশ্য প্রধানমন্ত্রীকে আপ্লুত করে। নীরবে চোখও মুছেছেন। পলকেই যেন ফিরে গিয়েছিলেন ইতিহাসের সেই অমোঘ সত্যগুলোর সময়ে। প্রিমিয়ার শোর আগে প্রধানমন্ত্রী মুজিব বায়োপিকের মুক্তির ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী মুজিব বায়োপিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা, কুশলী ও শিল্পী সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একেবারে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা এবং এই দেশের স্বাধীনতা অর্জন; এর ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। যেহেতু এটা জীবনীভিত্তিক, এখানে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য আমরা জানতে পারব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের যারা ছবিটির সঙ্গে যুক্ত, সবাইকে ধন্যবাদ। বিশেষ ধন্যবাদ শ্যাম বেনেগালকে, যিনি ছবিটি পরিচালনা করেছেন। তিনি উপস্থিত থাকলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। দেশবাসীকে চলচ্চিত্রটি দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই ছবিতে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু ও তার জীবন সম্পর্কে; সবচেয়ে বড় কথা আমার মা, দাদা-দাদিসহ পরিবারের কথা জানতে পারবেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর তার নাম মুছে ফেলার বহু চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসকে (মুক্তিযুদ্ধের) বিকৃত করার অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে, ইতিহাসকে কখনো মুছে ফেলা যায় না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চিত্রনাট্যকার অতুল তিওয়ারি, অভিনেতা আরিফিন শুভ, অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া ও দিলারা জামান।
প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল ছবিটি পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রযোজক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এবং ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এনএফডিসি) লিমিটেড নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় ৮৩ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। ছবিটির ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ৪০ শতাংশ ব্যয় ভারত বহন করেছে। আগামী ২৭ অক্টোবর ভারতে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ৩১ জুলাই উভয় দেশের সেন্সর বোর্ড থেকে ছবিটির সেন্সর সনদ দেওয়া হয়।
ছবিটিতে ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নুসরাত ইমরোজ তিশা জাতির পিতার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে এবং তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামান, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, মওলানা ভাসানীর চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া জায়েদ খান, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, গাজী রাকায়েত, মিশা সওদাগরসহ দেশের শতাধিক শিল্পী বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সংগীত পরিচালনা করেন ভারতের শান্তনু মৈত্র। বাংলা সংলাপ লিখেছেন বাংলাদেশের সাধনা আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শিহাব শাহীন ও অনম বিশ্বাস।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের মুম্বাইয়ে শুরু হয় ছবিটির শুটিং। মুম্বাইয়ের দাদাসাহেব ফালকে ও গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়, বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের বাড়ির আদলে সেট সাজিয়ে দৃশ্য ধারণ করা হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে শুটিং শেষ হয়।