মানবতাই ছিল সরদার ফজলুল করিমের কাছে প্রকৃত ধর্ম। তিনি সর্বদা জীবনের জয়গান গাইতেন। তার চিন্তা ও দর্শন এবং সৃষ্টি ও রচনার মধ্য দিয়ে তিনি সবসময় সমকালীন থাকবেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের নবম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
পরিষদের পক্ষে অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরদার ফজলুল করিমের জীবন, দর্শন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফৌজিয়া মোসলেম, সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার, নায়েমের উপপরিচালক স্বপন নাথ, প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ শীশ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শরীফ নূরজাহান ও নিবেদিতা রায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক মাসুদুর রহমানসহ অনেকে।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন ইডেন মহিলা কলেজের ফৌজিয়া রীতা ও মারুফা প্রীতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শারমিন সুলতানা নিশি, জিন্নাত আরা ও মুহাম্মদ নাইমুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আজম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত ইমরান।
অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজিয়েছেন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক এস এম মুকবুল হোসেন। আবৃত্তি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের একটি দল।
সরদার ফজলুল করিমের জন্ম বরিশালের আটিপাড়ায় আধুনিক শিক্ষার আলো পাওয়া এক গ্রামীন কৃষক পরিবারে। চল্লিশের দশকের গোড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের কৃতী ছাত্র ও স্বল্পকালীন শিক্ষক। সাম্যবাদী রাজনীতির টানে উচ্চশিক্ষা বৃত্তি ও শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। পাকিস্তান আমলে একাধিক মেয়াদে প্রায় এক যুগ জেল খাটেন। ১৯৫৪ সালে জেল থেকেই পাকিস্তান কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। মধ্য ষাটের দশক থেকে নিবিড় জ্ঞানচর্চা এবং সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতির গভীরতম পর্যবেক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ওই সময় তার কর্মস্থল বাংলা একাডেমি। একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী সরদার ফজলুল করিমকে গ্রেপ্তার করে। তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। স্বাধীনতার পরে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের বিশেষ আগ্রহে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন।
সরদার ফজলুল করিমের লিখিত গ্রন্থের মধ্যে আছে—আমি মানুষ, দর্শনকোষ, সেইসব দার্শনিক, চল্লিশের দশকে ঢাকা, গল্পের গল্প, আমার প্রিয় মুখ, নানা কথার পরের কথা, আমি সরদার বলছি, পাঠ-প্রসঙ্গ, রুমির আম্মা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, অনশনে আত্মদান, সঙ্গ প্রসঙ্গের লেখা, সেই সে কালঃ কিছু স্মৃতি কিছু কথা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজঃ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা।
মৌলিক লেখালেখির বাইরে, অনুবাদ কর্মে মনীষী সরদার ফজলুল করিমের অবদান অপরিসীম। তার অনুবাদকৃত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টস্টলের পলিটিক্স, রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট ও কনফেশনস এবং এঙ্গেলসের এ্যান্টি-ডুরিং। পাকিস্তান আমল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জাতীয় জীবনের সংকটময় মুহূর্তে যথার্থ বুদ্ধিজীবীর পালন করেছেন অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম। ২০১১ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসাবে তাকে বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি সরকারি-বেসকারি অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরষ্কার (২০০০) অন্যতম।
আজন্ম মানব সমাজের অগ্রগতির স্বপ্নে বিভোর থাকা সরদার ফজলুল করিমের জিজ্ঞাসা : হতাশার নিবাস কোথায়? তিনি বিশ্বাস করতেন : জীবন জয়ী হবে।
মন্তব্য করুন