সংস্কারের নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির উদ্যোগে রাজস্ব সংগ্রহ এরইমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তারা হতাশায় রয়েছে ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিভাগ করার নামে এনবিআর বিলুপ্তির উদ্যোগ অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এনবিআরের সংস্কার প্রয়োজন ও তবে সেটি হতে হবে বাস্তবমুখী এবং তা নির্বাচিত সরকারকে করতে হবে। তাই এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাকসেস্ বার অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত নয়, সংস্কার চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ অযাম খান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা ট্যাকসেস্ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মজুমদার (মেসবাহ)। সংবাদ সম্মেলনে দুই সংগঠনের অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সম্প্রতি প্রণীত একটি খসড়া অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশের স্বতন্ত্র রাজস্ব সংস্থাটি বিলুপ্ত হবে, যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করবে এবং দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এনবিআরকে সংস্কার করে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেটা না করে উলটো পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর ফলাফল কখনোই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আমরা কর আইনজীবীরা বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার প্রধান অংশীজন, অথচ আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা মতবিনিময় করা হয়নি। অংশীজনদের মতামত ছাড়া, কোনো গবেষণা ব্যতীত তড়িঘড়ি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ, উপদেষ্টা পরিষদ কার স্বার্থে অনুমোদন দিল এটা জাতি জানতে চায়। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত খসড়া অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, বাতিল চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের পক্ষে, রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির পক্ষে নই। প্রয়োজনে আয়কর নীতি বিভাগকে সংস্কার করে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, অবিলম্বে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা ও রাজস্ব প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ অযাম খান বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেট সহায়তার নামে আইএমএফ বা অন্যান্য জায়গায় থেকে সহায়তা এনে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে ঋণে জর্জরিত করেছে। বর্তমানে কমবেশি সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হয়, সেটি ১০ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করার একটি কর্ম-পরিকল্পনা করছিলাম। সেই মুহূর্তে দেখলাম রাজস্ব বিভাগ ভেঙে দিচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজস্ব অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এনবিআর ভেঙে দিয়ে দুটি বিভাগ করছে। এতে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব কর্মকর্তারা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন। রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দিয়ে কোন সংস্কারের দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমরা এখন ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিদায়ের পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে। জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার এখন জরুরি। তবে এনবিআর সংস্কার এই মুহূর্তে জরুরি নয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কারই বেশি জরুরি। রাজস্ব আহরণের সংস্কার করতে হবে সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। এই সংস্কার করতে হবে এমন ভাবে জাতে কোনোক্রমেই রাজস্ব আহরণ নিম্নমুখী না হয়। কর্মকর্তারা যেন হতাশায় না ভুগেন। এটি (এনবিআর সংস্কার) চার্টার করে নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, এই দুই মাসেই রাজস্ব আহরণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যা দেশ বিরোধী ও রাজস্ব আহরণবিরোধী। অনতিবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। তড়িঘড়ি করে কোনো অঙ্গনের, দেশের বা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে এনবিআর বিলুপ্ত করলে সেটি হিতে বিপরীত হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, এখনই এনবিআর বিলুপ্তকরণ স্থগিত করুন। দুটি বিভাগ করেছেন, সেটি স্থগিত করুন। অব্যাহতি বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিয়েছেন, সেটি স্থগিত করুন। আশা করি এই সরকার আজকের পর থেকে এই কার্যক্রম স্থগিত করবে। এই সরকার দেশ ও গণবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
মন্তব্য করুন