জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। এছাড়া তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভুগছেন ৬৪ শতাংশ মানুষ।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)তে ‘বিয়ন্ড দ্য হেডলাইনস : মেন্টাল হেলথ কন্সিকোয়েন্সেস অফ দ্য জুলাই আপরাইজং অ্যান্ড মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির উদ্যোগে এ এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
বিএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ ‘ইম্প্যাক্ট অফ ট্রমা অ্যান্ড ভায়োলেন্স এবং চাইল্ড অ্যান্ড এডোলোসেন্ট পপুলেশন’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, শৈশবের ট্রমা ও সহিংসতা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিলে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ ও আচরণগত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা শিশুর মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন, সাইকোলজিক্যাল ফাস্ট এইড প্রদান করেন, প্রমাণভিত্তিক থেরাপি প্রয়োগ করেন, প্রয়োজনে ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করেন এবং পরিবার, শিক্ষক ও কমিউনিটিকে নিয়ে সমন্বিত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সহানুভূতিশীল পরিবার, সচেতন শিক্ষক এবং নিরাপদ সমাজ একসাথে কাজ করলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, অভিভাবক, শিক্ষক ও যত্নদাতাদের আহ্বান জানাই শিশুর মানসিক কষ্ট বা পরিবর্তন লক্ষ করলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। দ্রুত হস্তক্ষেপ মানে ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা শুধু চিকিৎসকই নয়, তারা শিশুদের জন্য সহায়ক, পথপ্রদর্শক এবং ভবিষ্যৎ রক্ষাকারী।
বিএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান ‘মেন্টাল হেলথ ইম্প্যাক্ট অফ ভায়োলেন্স অ্যান্ড ট্রমা’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে বিএমইউ, নিটোর এবং এনআইইউ তে ভর্তি হওয়া ২১৭ জন রোগীর মাঝে বিষণ্নতার হার ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভোগা মানুষের হার ৬৪ শতাংশ। তাদের মধ্যে অনেকই বিষণ্নতা ও তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ এই উভয় সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে যারা গ্রামীণ এলাকার রোগী তারা নিজেদের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন ও তারা অধিকমাত্রায় উদ্বিগ্ন। কারণ তাদের ধারণা, হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পরে তারা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাবেন না। সেই কারণে সার্বজনীন শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তৈরি করা জরুরি।
মন্তব্য করুন